সিরাজগঞ্জে ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে স্কুলে বিক্ষোভ

0

বিনা বেতনে প্রায় ২৫ বছর চাকুরির পর এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। তারপরও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসীসহ স্বজনরা মরদেহ নিয়ে ঘুষের টাকা ফেরতের জন্য সোমবার সকালে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করেছে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেন। এরপর বিক্ষোভ তুলে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দাফন করেছে স্বজনরা। 

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। মৃত স্কুল শিক্ষিকা রোকেয়া বেগম (৫৫) গাড়াবেড় গ্রামের খয়ের উদ্দিনের মেয়ে ও একই গ্রামের আব্দুল করিমের স্ত্রী। 

তিনি জানান, এক দফায় তিনি নিজ হাতে বোনের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষককে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। সম্প্রতি বোন বোর্ডে গিয়ে জানতে পারেন তার এমপিওভুক্তি হয়নি। এমনকি ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিলেও বোর্ডে গিয়ে দেখেন তাকে সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরে তিনি ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক অপারগতা প্রকাশ করলে ২৯ জানুয়ারি টেনশনে রোকেয়া হার্টঅ্যাটাক করেন। তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর তার মরদেহ এলাকায় আনা হলে স্বজনরা লাশ নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন।
 
মৃত রোকেয়া খাতুনের ভাতিজা মোতালেব হোসেন রঞ্জু জানান, কয়েকদিন আগেও স্কুলের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু এমপিওর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২ লাখ টাকা ১০মিনিটের মধ্যে তার কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। আমি ৩০ মিনিটের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে উপজেলা পরিষদের গিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি জানান, জমি-জমা বিক্রি করে দফায় দফায় মোট ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়া হয়েছিল। তিনি আরো জানান, আমার টাকাও গেলো, চাকুরিও হলো না- এখন আমার ছেলে-মেয়েকে কি দিবো-এ কথা বলে চাচি হার্টঅ্যাটাক করেছিলেন।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোহরাব হোসেন জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর স্বজন ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি ঘটনাটি বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছরে বিনা বেতনে চাকুরি এবং এমপিও কাগজ রিজেক্ট হওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। 

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাজিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু ও প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম জানান, এমপিওভুক্তির খরচের জন্য ৪ লাখ টাকার মতো নেয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশনা মোতাবেক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক করে সব টাকা ফেরত দেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here