সিলেট স্ট্রাইকার্স মাঠে নামতে তখনও অনেক দেরি। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকেই ধীরে ধীরে গোলাপি হতে শুরু করল গ্যালারি। সিলেটের ম্যাচের আগেই পুরো গ্যালারি ভরে উঠল স্বাগতিক দলের সমর্থকে। আনন্দ-উল্লাসে ম্যাচের প্রথমভাগ পার করলেন তারা। কিন্তু পরে পাল্টে গেল সবকিছু। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় পর্যদুস্ত হলো সিলেট।
উৎসবের আবহে খেলা দেখতে আসা সিলেট সমর্থকরা বাড়ি ফিরেছেন প্রিয় দলের তৃতীয় পরাজয়ের বেদনা নিয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৫২ রানে হেরেছে সিলেট।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন স্পিনারের রান আপে মিডিয়াম পেসারের মতোই বোলিং করা আলিস। শিশিরভেজা উইকেটে টার্নের বদলে পেসারদের মতোই সুইং করিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই রহস্য স্পিনার।
২০১৯ সালের বিপিএলে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আলিস। এরপর অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে ধরা পড়ে অনেকটাই আড়ালে চলে যান তিনি। চলতি আসরের আগে সবশেষ বিপিএল খেলেন ২০২০ সালে। এবার প্রথম সুযোগ পাওয়া ম্যাচে ৩ ওভারে তিনি দেন ৩০ রান। তবে তার ওপর আস্থা রাখে কুমিল্লা। তারই প্রতিদান দিলেন আলিস।
রান তাড়ায় জয়ের কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি সিলেট। পাওয়ার প্লেতেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান চার ব্যাটসম্যান। দলের স্কোর ৩০ ছোঁয়ার আগে বিদায় আরও দুজনের। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ মিঠুনের রান আউটে সিলেটের পিছিয়ে পড়ার শুরু। এক বল পর নাজমুল হোসেন শান্তকে ফেরান আলিস। এরপর সামিত প্যাটেল ও ইয়াসির আলি চৌধুরিও ফেরেন অল্পেই।
অষ্টম ওভারের পরপর দুই বলে বেন কাটিং ও মাশরাফি বিন মুর্তজার উইকেট নেন আলিস। ২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অল আউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় সিলেট।
সপ্তম উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন জাকির হাসান ও রায়ান বার্ল। তবে চতুর্দশ ওভারে দুজনকেই ফেরান রোস্টন চেইস। ৬ চারে ৩৩ বলে ৪১ রান করেন জাকির। বার্ল খেলেন ১৮ বলে ১৪ রানের ইনিংস। লেজটুকু গুটিয়ে দেন খুশদিল শাহ ও তানভির ইসলাম।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কুমিল্লাও শুরুতে চাপে পড়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারে বেন কাটিংয়ের তিন বলে দুটি চার মেরে চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন কুমার দাস।
চতুর্থ ওভারে রেজাউর রহমান রাজার বলে কোনো রান নিতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে রাজার পরের ওভারে ছক্কার পর দুই চারে ১৬ রান নেন ইমরুল কায়েস। পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় কুমিল্লা। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় সিলেট। সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে ১৬ বলে ১৪ রান করা রিজওয়ানকে কট বিহাইন্ড করেন সামিত প্যাটেল। তার পরের ওভারে ফেরেন ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩০ রান করা ইমরুল।
মাশরাফিকে ছক্কা মেরে হাত খোলার ইঙ্গিত দেওয়া তাওহিদ হৃদয় কাটা পড়েন রান আউটে। পরের ওভারে চেইসকেও থামান সামিত। একাদশ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ষষ্ঠ উইকেটে ৩৯ রানের জুটিতে দলকে একশ পার করান জাকের আলি ও খুশদিল। সেটাই পরে হয়ে ওঠে ম্যাচের ফল নির্ধারক! ২২ বলে ২১ রান করেন খুশদিল। জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ২৭ বলে ২৯ রান। ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন সামিত। রিচার্ড এনগারাভা ধরেন ২ শিকার। তিন ম্যাচে প্রথমবার পুরো ৪ ওভার বোলিং করে ১৯ রান দেন মাশরাফি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৩০/৮ (লিটন ৮, রিজওয়ান ১৪, ইমরুল ৩০, হৃদয় ৯, চেইস ২, জাকের ২৯, খুশদিল ২১, ফোর্ড ২, তানভির ৩*, আলিস ০*; কাটিং ১-০-১০-১, তানজিম ৪-০-১৯-১, এনগারাভা ৪-০-২৫-২, রাজা ৩-১-২৪-০, সামিত ৪-০-১৬-৩, মাশরাফি ৪-০-১৯-০)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৬.২ ওভারে ৭৮ (শান্ত ৫, মিঠুন ০, সামিত ৪, জাকির ৪১, ইয়াসির ১, কাটিং ১, মাশরাফি ০, বার্ল ১৪, তানজিম ৪, রাজা ৪*, এনগারাভা ১; ফোর্ড ৩-০-৯-১, আলিস ৪-১-১৭-৪, তানভির ২.২-০-৯-১, চেইস ৪-০-১৭-২, মুস্তাফিজ ২-০-২২-০, খুশদিল ১-০-৪-১)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৫২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আলিস আল ইসলাম