বোলিংয়ে এক সেশনেই ৭ উইকেট। ব্যাটিংয়ে এক উইকেট হারিয়ে শতরান পার। ধন্দে পড়ে যেতে হচ্ছিল, এটা পাকিস্তানই তো! অস্ট্রেলিয়ার ওপর একরকম ছড়ি ঘোরাচ্ছিল তারা। কিন্তু দারুণ এক স্পেলে মোড় ঘুরিয়ে দিলেন প্যাট কামিন্স। অধিনায়কের দারুণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াল যে, দিনশেষে এগিয়ে তারাই।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৩১৮ রানে। ৩ উইকেটে ১৮৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দল এক সেশনেই হারায় ৭ উইকেট। পাকিস্তানের বোলিং তো ভালো ছিলই, কিন্তু ক্যাচিংয়ের উন্নতি ছিল দেখার মতো।
বৃষ্টির কারণে আগের দিন ৩৪ ওভার খেলা হয়নি। দ্বিতীয় দিনের খেলা তাই শুরু হয় আধঘণ্টা আগে। মার্নাস লাবুশেন ও ট্রাভিস হেডের জুটি টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। শাহিন আফ্রিদির অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ধরা পড়েন দ্বিতীয় স্লিপে। লাবুশেন ও মিচেল মার্শ সেই ধাক্কা সামাল দেন অনেকটাই। ১৩৫ বলে ফিফটি করে একইভাবে এগোতে থাকেন লাবুশেন। স্বভাবজাত আগ্রাসী সব শট খেলেন মার্শ।
দ্বিতীয় নতুন বল পাওয়ার ঠিক আগে লাবুশেনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আমের জামাল। তার অফ স্টাম্প ঘেঁষা বাড়তি লাফানো ডেলিভারিতে ভাঙে লাবুশেনের ৪ ঘণ্টার প্রতিরোধ। ১৫৫ বল খেলে ৬৩ রানে বিদায় নেন তিনি স্লিপে ধরা পড়ে। এরপর আর উল্লেখযোগ্য কানো জুটি হয়নি। দ্বিতীয় নতুন বলে নিয়মিত উইকেট এনে দেন পাকিস্তানের বোলাররা। মূল বাধা হয়ে থাকা মিচেল মার্শ আউট হন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদের কৌশলি অধিনায়কত্বে। পয়েন্ট ফিল্ডারকে একটু পিছিয়ে মাঠের মাঝামাঝি রাখেন তিনি। বাঁহাতি পেসার আমির হামজার বলে সেখানেই ধরা পড়েন মার্শ। ৬ চার ও ১ ছক্কায় তিনি করেন ৪১ রান।
৬৮ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। আগের টেস্টে অভিষেক নজর কাড়ার পর এবারও ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার আমের জামাল। অন্য তিন পেসার আফ্রিদি, হামজা ও হাসান আলি ধরেন দুটি করে শিকার।
লাঞ্চের পর ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের পেসারদের সামলে ১৫ ওভার নিরাপদেই কাটান আব্দুল্লাহ শফিক ও হাসান আলি। কিন্তু ন্যাথান লায়নকে এড়াতে পারেনি ইমাম। ৪৪ বলে ১০ রান করে তিনি ধরা পড়েন স্লিপে। এরপরই শফিক ও মাসুদের দারুণ জুটি। সূর্যের আলোয় তখন উইকেট কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে দুই ব্যাটসম্যানের কৃতিত্ব খাটো করার সুযোগ নেই। দারুণ ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন দুজন। লায়নের ওপর চড়াও হয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে চার-ছক্কা মেরে তাকে এলোমেলো করার চেষ্টা করেন মাসুদ। ৯০ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন শফিক, ৬৩ বলে মাসুদ।
অস্ট্রেলিয়াকে মনে হচ্ছিল যেন, কোনো জবাবই পাচ্ছে না তারা। জুটি ভাঙতে প্রয়োজন ছিল অসাধারণ কিছু। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সেটিই করে দেখান কামিন্স। নিজের বলে চোখধাঁধানো এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে তিনি থামান শফিককে। ৬২ রানে ফেরেন এই ওপেনার। জুটি শেষ হয় ৯০ রানে।
কামিন্সের পরের ওভারেই সেই ডেলিভারি। অস্বস্তিকর লেংথ থেকে স্কিড করে ভেতরে ঢুকে বাবরের বেলস উড়িয়ে দেয় বল। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান করতে পারেন কেবল ১ রান। গত ডিসেম্বরে করাচিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১ রানের ইনিংসের পর টানা ৯ ইনিংসে ফিফটি নেই তার। এরপর উইকেট ধরা দিতে থাকে অন্যদের হাত ধরেও। ফিফটির পর লায়নকে আরেক দফায় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট হারান অধিনায়ক মাসুদ (৫৪)। রাউন্ড দা উইকেটে ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বাঁহাতি সাউদ শাকিলকে বোল্ড করে দেন জশ হেইজেলউড।
কামিন্স আবার শেষ বিকেলে ফিরে ছক্কা হজম করেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে। তবে আরেক প্রান্তে তিনি ফিরিয়ে দেন সালমান আঘাকে। ৪৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন টালমাটাল পাকিস্তান। তবে রিজওয়ান আর আমের জামালের দৃঢ়তায় দিনের বাকি সময় আর কোনো উইকেট হারায়নি তারা। দলে ফেরা রিজওয়ান দিন শেষ করেন ৩৪ বলে ২৯ রান নিয়ে। ২৬ বলে ২ রানে অপরাজিত জামাল। তবে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছুঁতে হলে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে তাদেরকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৯৬.৫ ওভারে ৩১৮ (আগের দিন ১৮৭/৩) (লাবুশেন ৬৩, হেড ১৭, মার্শ ৪১, কেয়ারি ৪, স্টার্ক ৯, কামিন্স ১৩, লায়ন ৮, হেইজেলউড ৫*; আফ্রিদি ২৭-৫-৮৫-২, হামজা ২২-৫-৫১-২, হাসান ২৩.৫-৭-৬১-২, জামাল ১৯-১-৬৪-৩, সালমান ৫-০-২২-১)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৫ ওভারে ১৯৪/৬ (শফিক ৬২, ইমাম ১০, মাসুদ ৫৪, বাবর ১, শাকিল ৯, রিজওয়ান ২৯*, সালমান ৫, জামাল ২*; স্টার্ক ১৩-২-৫০-০, হেইজেলউড ১২-৪-২৯-১, কামিন্স ১৪-১-৩৭-৩, লায়ন ১৩-১-৪৮-২, মার্শ ৩-০-১৬-০)।