কিডনি পাচারচক্রে জড়িত দিল্লির শীর্ষ হাসপাতাল

0

কিডনি পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ভারতের স্বনামধন্য ও অন্যতম শীর্ষ হাসপাতাল অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে। লন্ডন ভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালটি ভারতের ধনী রোগীদের জন্য মিয়ানমারের গরিব মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে সস্তায় কিডনি কিনে আনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কিডনি প্রদান প্রক্রিয়ায় ব্যাপক জাল নথিপত্রের আশ্রয় নেওয়া হয়। জাল নথিপত্রের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে দাতার আত্মীয়তার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে রোগী ও দাতার ভুয়া পারিবারিক ছবিও উপস্থাপন করা হয়।

ভারতীয় ও বার্মিজ আইন অনুযায়ী, একজন রোগী স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে কোনও অঙ্গ গ্রহণ করতে পারবেন না।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় যে, এই ধরনের অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রচুর অর্থের হাতবদল হয়।

প্রতিবেদনে একটি কিডনি কেলেঙ্কারির ঘটনার উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, দাউ সোয়ে সায়ে নামে ৫৮ বছর বয়সী একজন রোগী ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি কিডনির জন্য ৮ মিলিয়ন মিয়ানমার কিয়াত পরিশোধ করেন। তার কিডনি দিল্লির হাসপাতালটিতেই প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি দাতা ওই রোগীর সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। 

বিষয়টি জানার জন্য টেলিগ্রাফ প্রতিবেদক একটু কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি জানান- তার ‘অসুস্থ খালা (আন্টি)’র জরুরি ভিত্তিতে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি দান করার মতো তার পরিবারে কোনও সদস্য নেই। তখন তাকে অ্যাপোলোর মিয়ানমার অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয় এবং জানানো হয়- একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে কিডনি দান করার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।

ওই প্রতিবেদককে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে অ্যাপোলোর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন, জানান, “মিয়ানমারে প্রতিস্থাপনের জন্য ৮০ শতাংশ কিডনি লেনদেন অপরিচিতদের মধ্যেই হয়ে থাকে। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে হয় মাত্র ২০ শতাংশ।”

এরপর তার সঙ্গে মান্দালয়ের এক যুবকের পরিচয় করানো হয়। তার বয়স ২৭ বছর। ওই যুবক বলেন, “তার কিডনি বিক্রি করতে হবে। কারণ তার বৃদ্ধ বাবা-মা’র অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়।”

এই আলোচনার সময় এজেন্ট জানান, যুবকের কিডনির জন্য প্রায় তিন হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা) খরচ হবে। 

এসময় ওই এজেন্ট আরও জানান, তিনি গত পাঁচ বছর ধরে এই ধরনের অনুদানের ব্যবস্থা করছেন।

শুধু তাই নয়, কিডনি দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়ার জন্য ছবিগুলো কীভাবে নকল করতে হবে, এ সময় ছদ্মবেশি ওই প্রতিবেদককে সেই কৌশলও শিখিয়ে দেন আরেকজন এজেন্ট।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের তথ্যকে ‘মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখান করেছে।

বিষয়টি নিয়ে দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব এস বি দীপক কুমারের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ কে বলেন,  অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্টেশন অর্গানাইজেশনের পরিচালক ডা. অনিল কুমার বলেন, তারা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকণালয় অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবে। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ ইউকে, টাইমস অব ইন্ডিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here