বগুড়ায় নতুন ধানের গন্ধে ভরে উঠেছে কৃষকের উঠান

0

‘আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/সারামাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান/ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়/ কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়।’ এভাবেই কার্তিকের রূপের কথা পল্লী কবি জসীমউদ্দীন বলেছেন তার অমর সৃষ্টি কাব্যকাহিনী নক্সী-কাঁথার মাঠে। কবির সেই পাকা ধানের গন্ধ নিয়েই বগুড়ায় কৃষি শ্রমিক আর আমন চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রোদে পুড়ে সবুজ শীষ হয়েছে সোনালি। বাতাসে দোল খেয়ে ক্ষেতে যেনো ঝনঝন শব্দ করে বেজে উঠছে পাকা ধান। মুখরিত সেই সব শব্দই পাকা আমন ধান কাটার ডাক দিয়ে গেছে। নতুন ধানের গন্ধে ভরে উঠেছে বগুড়ায় কৃষকের উঠান। মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব আর উঠানে চলছে কৃষাণীদের ধান শুকানোর ব্যস্ততা। সবুজ মাঠের দেশে যেনো সোনালি রঙের ধানের বিপ্লব। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল উৎপাদন হবে।

বগুড়া জেলা শহরের শাখারিয়া, সাবগ্রাম, নন্দীগ্রাম সড়ক, কাহালু সড়ক, শিবগঞ্জ সড়কসহ পুরো জেলায় ধান কাটার উৎসব চলছে। শ্রমিকরা দলবেঁধে ধানকেটে মাড়াই করছেন। বগুড়া শহরের চারমাথা, তিনমাথা, মাটিডালি, মহাস্থান এবং রেলওয়ে স্টেশনে ধান কাটার শ্রমিকদের দেখা গেছে। তারা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে বগুড়ায় আসছে ধান কাটতে। ধানকাটার শ্রমিকরা পালা করে কাজ করেন। শ্রমিকরা বগুড়া অঞ্চলের ধানকাটা মাড়াই শুরু করেছে। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়ায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। এরমধ্যে এবার জেলায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করে চাষিরা। চাষের পর থেকে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমন চাষী মোঃ আমিনুর রহমান জানান, সারের কোন সমস্যা ছিল না। সময়মত আমন চাষের পর যত্নের পর ধান পেকেছে। এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বগুড়া সদর উপজেলার আমন চাষি আল মামুন জানান, তিন বিঘার মধ্যে দুই বিঘা ধান কাটা হয়েছে। আর এক বিঘার ধান কাটা চলছে। তবে এবার শ্রমিকের মূল্য বেশি। এক বিঘা ধান কাটতে শ্রমিকের পিছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের ধান চাষি আয়ুইব হোসেন জানান, বগুড়ার বিভিন্ন হাটে আমন নতুন ধান বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে ধানের মণ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝে ধান বিক্রি হয়েছে ১০৫০ টাকা মণ। তিনি বলেন, এবার ভালো ফলন পেয়েছেন। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে বিঘা প্রতি ১৭ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ ধান পাওয়া যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধান রোপণ করে চাষিরা। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ধান কর্তন শেষে কৃষকের ঘরে উঠে সোনালি ফসল।
 
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: মতলুবর রহমান জানান, চলতি বছর সার ও বীজের কোন সমস্যা হয়নি। এছাড়া চাষের পর আমনের জমিতে পোকার আক্রমণ হয়নি। সে কারণে ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ হেক্টর জমিতে বেশি আমন চাষ হয়। ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত ফলন বেড়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here