আমবাগানে বস্তায় আদা চাষে ঝোঁক

0

নওগাঁর পত্নীতলায় আম বাগানে গাছের নিচে বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন চাষি রুহুল আমিন। এ পদ্ধতি সহজ ও খরচ কম এবং লাভ দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই আদা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। 

জেলায় আদার চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এ বছর জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩৯০ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন হবে। জেলায় প্রায় ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। যা থেকে ৪৮ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই বস্তায় আদা চাষ ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

জেলার পত্নীতলা উপজেলার পাটি আমলাই গ্রামের চাষি রুহুল আমিন। গত তিন বছর আগে আম বাগানে গাছের নিচে ফাঁকা জায়গায় ৪০টি বস্তায় আদা চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো পাওয়ায় পরের বছর আরও ৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেন। চলতি বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প এর আওতায় আম বাগানের ৫০ শতাংশ জমিতে ১৪ হাজার বস্তায় বারী-১ জাতের আদা চাষ করেছেন।

আদা চাষি রুহুল আমিন বলেন, প্রতি বস্তায় (বস্তা-মাটি-জৈবসার-বীজ) আদা চাষে খরচ পড়েছে ২০ টাকা। যেখানে মোট খরচ পড়েছে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি বস্তায় ৮০০ গ্রাম আদা উৎপাদন হিসেবে বর্তমানে (২২০ টাকা পাইকারি) যার বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। পাইকাররা বাড়ি থেকে আদা কিনতে অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি এখন বিক্রি করতে চাই না। বাজারে আদার দাম ঊর্ধ্বগতি। আশা করছি দাম ভালো পাব। আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হয়েছি। 

রুহুল আমিনের স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, আমাদের দেখে গ্রামের অনেকেই বাড়িতে খাওয়ার জন্য আদা চাষ করেছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই আদার খেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছে। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি স্বামীকে আদার খেতে পানি দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কার কাজে সহযোগিতা করেছি। আশা করছি আদার ভালো ফলন পাব। আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ বস্তায় আদা চাষের ইচ্ছা আছে। 

অপর আদা চাষি আরাফাত হোসেন বলেন, প্রথমদিকে বস্তায় তার (রুহুল আমিন) আদা চাষ দেখে এলাকার অনেকেই হাস্যকর বলে মনে করত। তবে বছর শেষে যখন ভালো মুনাফা পেল অনেকের সেই ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আদার খেত দেখতে এবং পরামর্শ নিতে আসছে। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী বছর ১০ শতাংশ জায়গায় ১ হাজার বস্তায় আদা চাষের আগ্রহী হয়েছি।

পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আদা চাষে ইতোমধ্যে ২০০ জন কৃষক-কৃষাণিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে চারজন চাষিকে কৃষি বিভাগ থেকে ২০০ পিস জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারে বছরে ৭-৮ কেজি আদার চাহিদা। প্রতিটি পরিবার যদি ২০ বস্তায় আদা লাগায় তাহলে তার বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব।

তিনি আরও জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। আমের মৌসুম ছাড়া বাকি সময় গাছের নিচের অংশ ফাঁকা পড়ে থাকে। আমবাগানে যদি আদা চাষের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র পাঠানো সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here