তেল জাতীয় ফসল পেরিলা চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

0

দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এবং বিদেশেও রফতানি করতে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন ও উচ্চমূল্যের একটি ভোজ্য তেলজাতীয় ফসল পেরিলা চাষ ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ, খানসামায় চাষ সফল হওয়ায় এর চাষে অনেক আগ্রহ বাড়ছে। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা চাষে অধিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই তেল জাতীয় পেরিলা চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা যাবে।

ভোজ্যতেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ছে আমদানিও। এবার পরিত্যক্ত জমিতে পেরিলা চাষ করে ব্যাপক আর্থিক লাভেব সম্ভাবনা দেখছেন পেরিলা চাষি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মজিবর রহমান। গত দু’বছর থেকে চাষ করছেন। আগামীতে বড় পরিসরে চাষের ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

চাষি মজিবর রহমান বলেন, পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে। আমি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ দেখে পেরিলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। রংপুরের কিশোরগঞ্জ এলাকার শাহজাহান আলীর নিকট গত ২০২২ সালে পেরিলার বীজ সংগ্রহ করে ১০ শতক জমিতে চাষ শুরু করি। তখন ৫০ কেজি পেরিলা পিই। ৫ কেজি পেরিলা থেকে ২ লিটার তেল পাওয়া যায়।
ভোজ্যতেল হিসেবে এর গুণাগুণ খুব উচ্চমানের। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। সার কম লাগে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে এর ফলন ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি পেরিলা চাষে বেশ উপযোগী। ছায়াযুক্ত স্থানে পেরিলা চাষ করা যায়। এর গাছ গরু-ছাগলও খায় না। এ গাছের কচিপাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এর পরিচর্যায় তেমন কোনো খরচ নেই।

তিনি আরও জানান, এবার তিনি পতিত ৫০ শতক জমিতে পেরিলা চাষ করে কাটা-মাড়াই করছেন। এটি আশ্বিনে ফুল আসে এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণে কাটা-মাড়াই করা যায়। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বীজ রোপণ থেকে ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ হবে। ফসল থেকে প্রাপ্ত পেরিলার তেল প্রায় ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। আগামীতে এটি বড় পরিসরে চাষ করার ইচ্ছা আছে।

খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, দেশে পেরিলার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভোজ্যতেল হিসেবে এর গুণাগুণ অত্যন্ত উচ্চমানের। আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পেরিলা চাষে যেন সবাই এগিয়ে আসে। আমরা চেষ্টা করছি অদূর ভবিষ্যতে এর চাষ সারাদেশে সম্প্রসারণ করা যায়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘসময় গবেষণার পর ২০২০ সালে দেশের ১৪টি জেলায় সফলভাবে পেরিলার পরীক্ষামূলক চাষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় পেরিলা। চলিত বছরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেরিলা চাষ হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here