পাবনার আটঘরিয়ায় ২১ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার গত তিন মাস যাবত বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে তিনমাস বেতন না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এই পরিস্থিতির শিকার উপজেলার ষাটগাছা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী আলমগীর হোসেনে অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করে যাচ্ছি। অথচ মাঝে মধ্যেই কয়েক মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকে। এখন প্রায় সাড়ে তিন মাস বেতনহীন রয়েছি। পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার। সকলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠদের চিকিৎসার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বেতন বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
অপর স্বাস্থ্যকর্মী মোবারক সরকার নাহিদ জানান, স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে বারবার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। চাকরি জীবনের দীর্ঘ এই সময়ে আরো অনেক সুযোগ সুবিধার কথা শুধু শুনেই এসেছি, দৃশ্যত কোন কিছুই এখনো দেখিনি। যেখানে ট্রাস্ট আইনে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে প্রজ্ঞাপনে।
সরেজমিনে উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের গোপালপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি মহিলা, শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তারা।
এ সময় নিয়মিত সেবা নিতে আসা গোপালপুর গ্রামৃর নাছিমা খাতুন বলেন, ক্লিনিকে এসে আমরা কখনোই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছি এরকম হয়নি। ক্লিনিকের যারা চিকিৎসা দেন, সবাই আন্তরিক। তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে শুনে বিষয় টা খারাপ লাগলো। যারা আমাদের জন্য কষ্ট করছেন, তাদের বেতন টা চালুর জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট ও সিবিএইচসি এর অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সাময়িকভাবে বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন পাস হওয়ার পরেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছায়নি বলে দাবি করেছেন তারা।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: আব্দুল্লাহ আল-আজিজ জানান, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি প্রকল্পের অধীনে চলছে। মূলত ওই প্রকল্পই কমিউনিটি ক্লিনিকের বেতন ছাড় দেয়। তবে গত জুলাই মাস থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় আপাতত বেতন আটকে আছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনরায় নিয়মিত বেতন চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, আশা করছি অর্থপ্রাপ্তি হলেই বেতন পাবে কর্মীরা।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন ছাড় না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে কাজের আগ্রহ ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।