প্রশংসায় ভেসেছেন শেখ হাসিনা, পুনরায় উঠেছে রোহিঙ্গা ইস্যু

0

পর্দা নামল নিউইয়র্কে শুরু হওয়া জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে দশ দিনব্যাপী এ অধিবেশনের সমাপ্তি টানা হয়। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ প্রভাবশালী দেশের চারটির শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতির কারণে অনেকটাই ম্রিয়মান ছিল বিশ্বর সর্বোচ্চ প্লাটফর্মের এই অধিবেশন। অন্যদিকে, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটি পুনরায় তুলে ধরাকে বিশেষ অর্জন বলছেন বিশ্লেষকেরা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ অধিবেশন শুরু হলেও মূল অধিবেশন শুরু হয় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, মানবাধিকার কর্মী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তর প্রাঙ্গণ। এ বছর সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, ‘আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন’। 

এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সপ্তদশ বারের মতো ইউএনজিএ অধিবেশনে তিনি বাংলায় ভাষণ দেন।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয় তুলে ধরেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাইড ইভেন্টে অংশ নেন। সেখানে মিয়ানমার থেকে আসার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি তথা বৈশ্বিক বাস্তবতায় অনেক কিছুই অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে এটা মানতেই হবে যে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনকে ঘিরে বাংলাদেশের অর্জনের ঝুলিতে অনেক কিছুই জমা হয়েছে। দেশীয় তথা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সমালোচনা ছিল তুঙ্গে। অনেকে মনে করেছিলেন যে সেখানে নির্বাচন, রাজনীতিই হবে মূখ্য আলোচ্য। কিন্তু না, তা হয়নি। বরং দেশীয় রাজনীতিকে গৌন করে বিশ্বমঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে পেরেছেন। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক ফোকাস থেকে অনেকটা হারিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটেনশন ফিরেয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজেকেই মেলে ধরতে পেরেছেন বিশ্ব নেতা হিসেবে। তার নেতৃত্বের প্রশংসা হয়েছে সর্বমহলে।

বিশ্ব নেতাদের দেওয়া ভাষণের বরাত দিয়ে তারা বলছেন, ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় আশা করা হয়েছিল এই বিশ্ব সংস্থাটি পৃথিবী থেকে যুদ্ধ, অনুন্নয়ন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঠেকাবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যে দেশগুলো জার্মানি ও তার মিত্রদের পরাস্ত করে তারাই এই সংস্থা গঠনের আসল চালিকাশক্তি। কিন্তু তাতে দেশগুলোর বন্ধুত্বে চিড় ধরতে খুব বেশি দিন লাগেনি। শুরু হয়ে গেল পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই। যারা যুদ্ধ ঠেকাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারাই যুদ্ধ বাঁধাতে ছিল সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। দেশে দেশে বিভক্তি তৈরি করে যার যার প্রভাব বলয়ে আনাই ছিল তাদের আসল লক্ষ্য। এরপর ৭৭টি বছর কেটে গেলেও অবস্থা বদলায়নি, বরং বহুগুণে অবনতি ঘটেছে। পাঁচটি দেশকে তাদের সার্বিক গুরুত্বের কারণে এই সংস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ‘ভেটো’ প্রদানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অথচ এ বছর সেই ৫ দেশের ৪ নেতাই ছিলেন অনুপস্থিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here