দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তার এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের দিন থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে, বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি গেছেন। তার অনুপস্থিতিকালীন সময়ে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালন করবেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
এই প্রজ্ঞাপন অনুসারে, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতকালীন সময়ে অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অথবা প্রধান বিচারপতির যাত্রার তারিখ হতে পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালন করবেন।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, পবিত্র ওমরাহ পালনে প্রধান বিচারপতি ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সৌদি আরব গেছেন।
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ডা. আখলাকুন হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের মায়ের নাম মরহুম বেগম হোসনে আরা হোসাইন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদ প্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডস এর হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার বিচারকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন।
‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।