সৌদির বিরুদ্ধে সীমান্তে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হত্যার অভিযোগ

0

এবার সৌদি আরবের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেশী ইয়েমেন সীমান্তে এই ঘটনা ঘটিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। সৌদি আরবের এই কাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউ প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উন্নত জীবনের আশায় ইয়েমেন পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব পৌঁছানোর চেষ্টার সময় সীমান্তে কয়েকশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ইথিওপিয়ার নাগরিক।

‘দে ফায়ারড অন আস লাইক রেইন’ (ওরা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি করে) শিরোনামে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারদাতাদের দাবি, ইয়েমেনের উত্তর সীমান্তে তাদের ওপর গুলি ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে সৌদি আরবের পুলিশ এবং সৈন্যরা।

পৃথকভাবে ভুক্তভোগী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসিও। তারা বলেছেন, রাতের অন্ধকারে সৌদি প্রবেশের চেষ্টা করা ইথিওপিয়ানদের মধ্যে বহু নারী এবং শিশুও ছিল। সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালেই তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।

মুস্তফা সৌফিয়া মোহাম্মদ নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, গুলি চলছিল তো চলছিলই।

গত বছরের জুলাই মাসে সৌদি প্রবেশের চেষ্টার সময় গুলির মুখে পড়েছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি দল। এতে অন্তত ৪৫ জন প্রাণ হারান। তবে কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যান সৌফিয়া।

তিনি বলেন, আমি প্রথমে খেয়ালই করিনি যে আমার গুলি লেগেছে। কিন্তু যখন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, দেখি আমার পা নেই।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সৌফিয়ার বাম পায়ের পাতা তার শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরে কৃত্রিম পা লাগানো হয় তার শরীরে। এখন ইথিওপিয়াতেই রয়েছেন এই তরুণ। তবে পুরোপুরি ওলোটপালোট হয়ে গেছে তার জীবন। ক্র্যাচে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে চলতে হয় তাকে।

দুই সন্তানের বাবা সৌফিয়ার কথায়, পরিবারের উন্নতির আশায় আমি সৌদি আরবে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যা ভেবেছিলাম তা হল না। এখন বাবা-মাকেই আমার সব কাজ করতে হচ্ছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবমতে, প্রতি বছর দুই লাখের বেশি মানুষ হর্ন অব আফ্রিকা থেকে প্রথমে সমুদ্র পাড়ি এবং তারপরে ইয়েমেন পেরিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পথিমধ্যে এদের অনেকেই কারাভোগ ও মারধরের শিকার হন। তাছাড়া সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার বিপদও কম নয়। গত সপ্তাহেই জিবুতি উপকূলে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় ২৪ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ হয়েছেন।

তবে এত বাধা পেরিয়ে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি যারা পৌঁছান, তারা সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করেছে এইচআরডব্লিউ।

সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নাদিয়া হার্ডম্যান বলেছেন, আমরা সেখানে যা নথিভুক্ত করেছি, তা মূলত গণহত্যা। আমি শত শত গ্রাফিক ইমেজ এবং ভিডিও দেখেছি, যা বেঁচে যাওয়ার মানুষেরা আমার কাছে পাঠিয়েছিল। সেগুলোতে ভয়ঙ্কর আঘাত এবং বিস্ফোরণের ক্ষত দেখা গেছে।

তবে লেখকরা বলছেন, সীমান্ত ক্রসিংয়ের দূরত্ব এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা কঠিন হওয়ায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন তা নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হয়নি।

হার্ডম্যান বলেন, আমরা সর্বনিম্ন ৬৫৫ জনের কথা বলতে পারি, তবে এর সংখ্যা কয়েক হাজারও হতে পারে।

তার ভাষ্যমতে, আমরা প্রমাণ করেছি যে, নির্যাতনগুলো ব্যাপক ও পদ্ধতিগত এবং এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের তুল্য হতে পারে। সূত্র: বিবিসি, এইচআরডব্লিউ ওয়েবসাইট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here