ইতোমধ্যে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-৩’। আর এরই মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে যত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে রাশিয়ার মহাকাশযান ‘লুনা ২৫’। রাশিয়ার মহাকাশযানটি এখনও উৎক্ষেপণ করা হয়নি। তবে জানা গেছে, খুব দ্রুতই এটি পৌঁছে যেতে পারে চাঁদে। এই পরিস্থিতিতে অল্পের জন্য রুশ মহাকাশযান ‘লুনা ২৫’- এর কাছে হারতে হতে পারে ভারতের ‘চন্দ্রযান-৩’কে।
কেননা, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করার কথা চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার এবং রোভারের। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা এই মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চাঁদের বলয়ে পৌঁছতে রুশ মহাকাশযানটির সময় লাগবে মাত্র পাঁচদিন। এরপর সেই মহাকাশযান প্রায় ৪ থেকে ৫ দিন চাঁদকে প্রদক্ষীণ করে কক্ষপথে নীচে নামতে থাকবে। এ কারণেই মনে করা হচ্ছে, ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর কিছুক্ষণ আগেই এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে পারে।
এদিকে পৃথিবীকে প্রদক্ষীণ করে চন্দ্রযান ৩-এর ‘অরবিট ম্যানুভারিং’ সফলভাবে সম্পন্ন হয় গত জুলাই মাসেই। এরপর ৫ আগস্ট ইসরোর মহাকাশযান প্রবেশ করে চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের কক্ষপথে প্রথম পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ ইসরোর মহাকাশযান। এর পরের পরীক্ষা হবে আগামী ৯ আগস্ট দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে।
চাঁদকে প্রদক্ষীণ করতে করতে ২৩ আগস্টে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ইসরোর মহাকাশযান। চাঁদে অবতরণের আগে বেশ কয়েকবার চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে চন্দ্রযান ৩। ধীরে ধীরে এক এক ধাপ করে এটি চাঁদের আরও কাছে আসবে। যেমনভাবে পৃথিবী প্রদক্ষীণের সময় চন্দ্রযান এক এক ধাপ করে পৃথিবীর থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিল, সেই একইভাবে চাঁদের আরও কাছে যাবে এই মহাকাশযান।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সব থেকে কাছে অবতরণ করেছিল নাসার সার্ভেয়ার-৭। ১৯৬৮ সালে সেদিন ৪০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কাছে অবতরণ করেছিল নাসার মহাকাশযান। জানা গেছে, চন্দ্রযান ৩-এর রোভার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ঘুরে-বেড়িয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে।
এদিকে, ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং দাবি করেছেন, চাঁদ আদৌ মানুষের বসবাসযোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ৩-এর রোভার।
জানা গেছে, চাঁদের কাছে গেলে বিভিন্ন ধাপে গতি কমানো হবে চন্দ্রযান ৩-এর। মহাকাশযানটি যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন বন্ধ হবে প্রোপালশন মডিউলের ইঞ্জিন। এরপর ‘বিক্রমের’ মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে নামবে ‘প্রজ্ঞান’। চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে পালকের মতো করে নীচের দিকে নামবে বিক্রম। এর জন্য লাগবে মোট ২০ মিনিট। বিক্রম চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান।
এর আগে চন্দ্রযান ২-এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করেছিল ভারত। সেবার অল্পের জন্য দক্ষিণ মেরুতে ঠিকভাবে অবতরণ করতে পারেনি ইসরোর মহাকাশযান। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, চন্দ্রযান ২-কে কোনওরকম ব্যর্থ বলা যায় না। কারণ ওই মিশনের ৯০ শতাংশ লক্ষ্যই পূরণ হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে গিয়ে মহাকাশযানটি ধ্বংস হলেও চাঁদের থেকে অনেক তথ্য ওই মিশন থেকে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই মিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এবার চন্দ্রযান-৩ মিশনে নেমেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। সূত্র: রয়টার্স, দ্য ইকোনমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া