চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের, বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

0

বিশ্বজুড়ে চাল হচ্ছে কোটি কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। এর জেরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেননা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রফতানিকারক দেশ হল ভারত। বিশ্বের মোট চাহিদার ৪০ ভাগ চাল আসে এই দেশ থেকে। চাল রফতানিতে শীর্ষে থাকা অন্য দেশগুলো হল- থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বব্যাপী কয়েক হাজার জাতের চাল উৎপাদন হয়। তবে আমদানি-রফতানি হয় মূলত চার জাতের চাল। এরমধ্যে সরু লম্বা দানার ইন্ডিকা চাল সবচেয়ে বেশি বেঁচা-কেনা হয়। আর বাকিগুলো হল- সুগন্ধি বাসমতি, ছোট দানার জাপোনিকা; যেটি সুসি এবং রিসোটস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং আঠালো চাল; যা মিস্টি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

চাল আমদানিকারক দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন, ফিলিপাইন এবং নাইজেরিয়া। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে ঘাটতি দেখা দিলে ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ চাল আমদানি করে। এখন আফ্রিকা মহাদেশেও চালের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া কিউবা এবং পানামাতেও শক্তির মূল উৎস হলো চাল।

গত বছর ভারত ১৪০টি দেশে ২২ মিলিয়ন টন চাল রফতানি করেছে। যার মধ্যে ৬ মিলিয়ন টন ছিল তুলনামূলক কমদামী ইন্ডিকা চাল। (গত বছর বিশ্বব্যাপী চাল আমদানি-রফতানি হয়েছে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন টন)।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যত চাল আমদানি-রফতানি হয়েছে তার ৭০ শতাংশ ছিল ইন্ডিকা চাল, আর এখন ভারত সেই চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর দেশটি খুদের চাল এবং বাসমতি চাল রফতানির ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করে। এরপরই আসল পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা।

প্রত্যাশিতভাবেই জুলাইয়ে ভারতের চাল রফতানি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আইএমএফের অর্থনীতিবিদ পিয়ে-অলিভার গোরিনচাস বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা চালের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং বিশ্বব্যাপী এই শস্যের দাম ১৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাজার বিশ্লেষক সিরলে মুস্তাফা বলেছেন, ভারত এমন সময় চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যখন ‘সময়টা ভালো নয়।’

প্রথমত ২০২২ সালের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়ছে। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত যা ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে

দ্বিতীয়ত, চালের সরবরাহে এখন বিঘ্ন দেখা যাচ্ছে, বাজারে নতুন চাল আসতে আরও তিন মাস বাকি আছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় অস্বাভাবিক আবহাওয়া— ভারতে অধিক বৃষ্টি ও পাকিস্তানে বন্যা চাল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এছাড়া সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের মূল্যও বেড়েছে।

অপরদিকে যেসব দেশ চাল আমদানি করে তাদের মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় আমদানি বেড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এ ব্যবসার ব্যয়ও বেড়েছে।

জাতিসংঘের বাজার বিশ্লেষক মুস্তফা বলেছেন, “আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যেখানে আমদানিকারকরা বাধার মধ্যে পড়েছেন। এসব আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা এখন এটিই দেখার বিষয়।”

ভারতের নিজস্ব মজুদকৃত ৪১ মিলিয়ন টন চাল রয়েছে। যা প্রয়োজনে তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। এসব চাল দেশটির ৭০ কোটি মানুষকে কম দামে দেওয়া হয়।

গত বছর ভারত বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির মধ্যে দিয়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। যা নির্বাচনের আগে দেশটির সরকারের ওপর তৈরি করেছে বাড়তি চাপ।

ভারতের কৃষি নীতির বিশেষজ্ঞ দ্বেবিন্দর শর্মা বলেছেন, এল নিনোসহ অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে চালের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এ কারণে সরকার আগে থেকেই এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছে।

খাদ্য বিষয়ক সংস্থা ইফরি জানিয়েছে, বিশ্বের ৪২টি দেশ তাদের মোট আমদানির অর্ধেক চালই আনে ভারত থেকে। আফ্রিকার কিছু দেশ রয়েছে যেগুলো মোট আমদানির ৮০ শতাংশ যায় এশিয়ার এ দেশ থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে খাদ্যপণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর ইন্দোনেশিয়া পাম ওয়েল, আর্জেন্টিনা মাংস, তুরস্ক শস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু ভারতের চাল রফতানির বিষয়টি অন্য। এর বড় প্রভাব পড়বে বিশ্বে। কারণ তাদের রফতানির ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশ। সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here