জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, নিঃসন্দেহে রাজনীতিতে সংলাপ, গোলটেবিল, আলোচনা ভাল বিষয়, কিন্তু সংলাপের টেবিলে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসেনি। আজকে বিশ্বসেরা রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার ভিশনারী নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উত্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা সংলাপের টেবিলে বসে অর্জিত হয়নি। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহত করে বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সংলাপের টেবিলে বসে সাধিত হয়নি।
শনিবার জয়পুরহাট-২ নির্বাচনী এলাকার আক্কেলপুর উপজেলায় ১০টি গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত ভিন্ন ভিন্ন দোয়া মাহফিল ও জন-আকাঙ্ক্ষা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন তিনি।
তিনি বলেন, আপনারা আমাদের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ছবক দিতে চান, নিরপেক্ষ নির্বাচন চান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চান। আমরা স্বাগত জানাই। আসুন, বসুন, আলোচনা করুন। নির্বাচনে যত খুশি পর্যবেক্ষক পাঠান। সবাই সরেজমিন নির্বাচন দেখুন। তারপর মন্তব্য করুন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয় কি না। তার আগে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি অসম্মান করবেন না।
তিনি বলেন, মানবাধিকারের ছবক দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাকে আমাদের জাতির পিতা, নারী ও শিশুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফেরত দিতে বলুন। যুক্তরাজ্যকে ৭১-এর নরঘাতক যুদ্ধাপরাধী এবং গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন বাংলাদেশের নাগরিক হত্যাকারী, এফবিআই কর্তৃক স্বীকৃত দুর্নীতিবাজকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে বলুন। জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে সখ্যতা বর্জন করুন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আপনাদের অনুধাবন করতে হবে। গভীরে প্রবেশ করে পর্যালোচনা করতে হবে। চায়নার সঙ্গে আপনাদের স্নায়ুযুদ্ধের অংশীদার আমরা নই। আপনারা জানেন কি না, চায়না আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের সহায়তা করেছে, ১৯৭৫ সালে আমাদের জাতির পিতার নৃশংস হত্যার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এরপরও আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অহিংস পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চায়নার সঙ্গে কেবলমাত্র অবকাঠামো উন্নয়নগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছি। চায়নার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। বরং যাদের পদলেহনে আপনারা তুষ্ট তারাই চায়নার পরীক্ষিত অংশীদার। আমাদের অবকাঠামো নির্মাণ খাত অনুন্নত ছিল বলে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা চায়নার সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র। এখনো আমরা উন্নত প্রযুক্তি বেশি মূল্য দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ক্রয় করি। রপ্তানির কাঁচামালের জন্য আমাদের চায়নার প্রতি নির্ভরতা ক্রমশ কমে আনছি। আমাদের দেশীয় নির্মাণ কোম্পানিগুলোর অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কর্পোরেট কোম্পানিতে উন্নীত হচ্ছে। অবকাঠামো নির্মাণে অল্পদিনের মধ্যেই আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হব, তখন আমাদের অন্য রাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরতা কমে আসবে। আমাদের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কাঁচামাল উৎপাদন কারখানা হচ্ছে। এ’খাতেও আমরা স্বল্পসময়ে সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হব। আপনারা নিজেরাও আপনাদের দেশে চাইনিজ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছেন। কয়দিন আগেও আপনাদের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চাইনিজ বিলিওনিয়ারদের জন্য আলাদা বিশেষ লেন ছিল। আপনাদের কর্মকাণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চায়নার প্রভাব খর্বের চেয়ে বরং বিস্তারে অধিকতর প্রভাব ফেলছে। বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের স্কলার টিম গঠন করে গবেষণা করা উচিত।
এসব উদ্বোধন, দোয়া মাহফিল এবং মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদ আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দ, জয়পুরহাট জেলা চেম্বার সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আহসান কবীর এবলব, পৌর মেয়র শহীদুল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজা সুলতানা মলি, মজিবর রহমান, আতিকুর রহমান মিঠু, আছিয়া খাতুন শম্পা, বেলাল হোসেন, মাজহারূল আনোয়ার লিটন, গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান, সজল চেয়ারম্যান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।