কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হোটেলকর্মী রিনা বেগম (৩৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন মূল আসামি আজমান হোসাইন শাকিলকে (২৩) গ্রেফতারের পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর দত্তের আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আজমান হোসাইন শাকিল। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, গত ১৭ জুন দুপুর ২ টার দিকে ভৈরব বাজারের টিনপট্টি এলাকায় জুয়েল মিয়ার বাসার ৩য় তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া হোটেলকর্মী রিনা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় ভিকটিমের মা রূপবানু খাতুন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ভিকটিম রিনা বেগম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম টালকী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের মেয়ে।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব শহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ঘটনায় জড়িত সন্দিগ্ধকে শনাক্ত করেন। গত ১৯ জুন হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আজমান হোসাইন শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। শাকিল লাখাই উপজেলার কালাউক গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল ঘটনায় জড়িত মর্মে স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়। রিনা বেগমের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি এলইডি টিভি মনিটর নিজের হেফাজতে থাকার কথাও স্বীকার করেন তিনি। পরে আসামিকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় আসামির আত্মীয়ের বাসা থেকে দুটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি এলইডি টিভি মনিটর উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার প্রায় ছয় মাস আগে ভৈরব বাজারের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ নেন রিনা বেগম। এ হোটেলে আগে থেকেই কাজ করতেন শাকিল। এ সুবাদে শাকিলের সঙ্গে রিনার পরিচয় এবং এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এমনকি তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়।
ঘটনার দিন (১৭ জুন) সকালে রিনা বেগম ও তার দুই ছেলে মোজাম্মেল (১৭) ও রিয়াজ (২০) এবং রিনার কথিত স্বামী দুলাল (৫৭) নিজ নিজ কাজে চলে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাকিল ভিকটিম রিনার বাসায় অবস্থান করে ফোন করে রিনাকে বাসায় আসতে বলেন। ফোন পেয়ে রিনা বাসায় গেলে তার কথিত স্বামী দুলালের জন্য বিভিন্ন অসুবিধা হচ্ছে বলে জানায় শাকিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রিনা বেগম রাগান্বিত হয়ে ঘরে থাকা ইট নিয়ে নিজেই নিজের মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন। শাকিল তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে শাকিল পিছন দিক দিয়ে রিনা বেগমের গলায় চেপে ধরলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য শাকিল প্রথমে রিনার গলায় ওড়না পেচিয়ে গিট দেয় এবং বাসা থেকে বের হয়ে যাবার সময় রিনার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি এলইডি টিভি মনিটর নিয়ে যায়। যাতে লোকজনের ধারণা হয় যে, এটি চুরির ঘটনা এবং চুরি সংঘটিত হওয়ার সময় রিনা বেগম খুন হয়েছেন।