হার্ট ফেইলিউর নিয়ে কিছু কথা

0

যখন হার্ট শারীরিক চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় তখন এ অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট ফেইলিউর বলা হয়ে থাকে। হার্ট ফেইলিউর পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বিভিন্ন কারণে হার্টের মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে অথবা হার্টে কর্মদক্ষতার অপ্রতুলতা দেখা দেয়। যেমন- হার্ট অ্যাটাকের মাধ্যমে হার্টের মাংসপেশির ক্ষতিসাধিত হওয়া বা হার্টের কোনো অংশের মাংসপেশি নষ্ট হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপের ফলশ্রুতিতে বিক্ষিপ্তভাবে সমগ্র হার্টের মাংসপেশির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের ফলেও উচ্চ রক্তচাপের মতো একই ধরনের ক্ষতিসাধিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে এসব অবস্থায় হার্ট খুব ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং দুর্বল হতে হতে এক সময় হার্ট ফেইলিউর পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ডায়াবেটিস, বাতজ্বরজনিত হার্টের ভালভের সমস্যা, জন্মগত হার্টের অস্বাভাবিকতা বা ত্রুটি একইভাবে হার্ট ফেইলুরের সৃষ্টি করে থাকে। এসব অসুস্থতার মধ্যে যদি কেউ একাধিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে খুব তাড়াতাড়ি হার্ট ফেইলিউর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হার্ট পাম্পের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে না পারায় পানি ও লবণ শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হতে থাকে। এ অবস্থায় হার্ট তার গতি বৃদ্ধি করে অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহের চেষ্টা করে, ফলশ্রুতিতে হার্টবিট বা নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়। হার্ট আয়তনে বড় হতে থাকে, একসময় হার্ট শারীরিক চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। ফলশ্রুতিতে হার্ট ফেইলুরের সৃষ্টি হয়।

সচরাচর কারণ : উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, হার্টের রক্তনালির ব্লক, ডায়াবেটিস, হার্টের ভালভের সমস্যা, হার্টের মাংসপেশির অসুস্থতা (কার্ডিওমায়োপ্যাথি), হার্টের বহিরাবরণের অসুস্থতা, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, জন্মগত হার্টের সমস্যা, মদ্যপান ও ধূমপান ইত্যাদি। 

জটিলতা : হার্ট ফেইলিউর থেকে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ায় আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে মানে শারীরিক ওজন কমতে থাকবে। সর্বোপরি ধীরে ধীরে শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকে, কারও কারও হার্ট ফেইলুর থেকে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো ভয়াবহ পরিণতি ঘটতে পারে।

রোগ নির্ণয় : হার্ট ফেইলিউর প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- ইসিজি, বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, রক্তে লবণের মাত্রা নির্ণয়, কিডনির অবস্থা দেখার জন্য সেরাম ক্রিয়েটিনাইন পরিমাপ করা, ডায়াবেটিস আছে কি না তা জানার জন্য রক্তের সুগার, শারীরিক যোগ্যতা পরিমাপ করার জন্য ইটিটি ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ণয় করা। হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসার জন্য একজন হার্ট স্পেশালিস্ট ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে শরীর ফুলে গেলে ফুসিড/লেসিক্স জাতীয় ওষুধ সাময়িকভাবে সেবন করতে পারেন এবং খাবারে লবণ গ্রহণের পরিমাণ অবশ্যই কম করতে হবে।

লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here