চুরির অপবাদে ২ শিশুকে নির্যাতন, প্রতিবাদ করায় হামলা

0

ঝালকাঠির রাজাপুরের সদর ইউনিয়নের রোলা গ্রামে দোকানে চুরির অপবাদে স্কুল পড়ুয়া দুই শিশু হাফিজুর রহমান (৭) ও রাকিব হোসেনকে (৯) রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই শিশুদের মা-বাবা ও দাদিসহ পাঁচজনকে বেধরক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার দুপুরে রোলা গ্রামের চকিদারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হাফিজুর রহমান রোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং তার ভাই রাকিব তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। 

নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ও হামলায় আহতরা অভিযোগ করে জানান, গত শনিবার রোলা গ্রামের স্কুল সংলগ্ন এলাকায় মিরাজের ছেলে হাফিজুর রহমান ও মৃত ফারুকের ছেলে তাওহিদ (৬) খেলাধুলা করছিল। এসময় স্থানীয় শাহ জামালের ছেলে মুছা ওই শিশুদের ডেকে খাবার দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় জাকির মোল্লা নামে এক ব্যক্তির দোকানের পেছনের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে টালিখাতা বের করায়।

ঘটনার সময় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে শিশুদের আটকায়। তখন মুছা নিজের দায় এড়াতে স্থানীয়দের সাথে মিলে ওই দুই শিশুকে চুরির অপবাধ দিয়ে রশি দিয়ে বেধে নির্যাতন করে। খবর পেয়ে স্থানীয় লিটু মেম্বর উপস্থিত হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে তাওহিদ, মুছা ও হাফিজুর রহমানকে ৬ হাজার করে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। কিন্তু শিশুরা মুছার নাম বলায় হাফিজুর রহমান ও রাকিবকে স্কুলে আসা যাওয়ার সময় মারধর করতো মুছা। ভয়ে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার ওই দুই শিশুর বাবা অটোরিকশা চালক মিরাজ তার দুই শিশুকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুরে মিরাজের বাড়িতে গিয়ে মুছা, ইসান ও তার বাবা শাহ জামাল মিলে রিকশার চেইন ও লাঠি দিয়ে অটোরিকশা চালক মিরাজ, তার স্ত্রী-দুই শিশু সন্তান ও মাকে বেধরক মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আউয়াল জানান, হামলাকারীরা প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে মিরাজের বাড়ির সামনে থেকে তাদের ধরে মারতে মারতে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে। এসময় আত্মরক্ষার জন্য মিরাজ ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে হামলাকারীরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করে এবং তাদের হত্যার হুমকি দেয়।

রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আসলাম হোসেন লিটু জানান, কাউকে জরিমানা করা হয়নি। শিশুদের তার পরিবারের কাছে দেওয়া হয় এবং তাদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জেনে স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে বলা হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে জানাতে অভিযুক্ত শাহ জামালের বাড়িতে গেলে তাদের ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায় এবং ইসান ও মুছা এবং তার বাবা শাহ জামালকে পাওয়া যায়নি।

তবে শাহ জামালের ভাই রুহুল আমিন জানান, শিশুদের মারধরের বিষয়টি দুঃখজনক। শাহ জামাল ও ইসান, মুছা বাড়িতেই ছিল, হয়তো কোথাও গেছে। তারা মারধর করেছে কিনা, তিনি জানেন না।

তবে স্থানীয়রা জানায়, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরে তালা দিয়ে তারা আত্মগোপনে রয়েছে।

রাজাপুর থানার এসআই আল হেলাল সিকদার জানান, দুই শিশুসহ আহতরা থানায় এসে বিষয়টি জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিক এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে অভিযুক্তরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here