বগুড়ায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের আর কোন দাবি নেই। আমাদের একটাই দাবি-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তারপর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের সরকার গঠন করতে চায়। আর আওয়ামী লীগ চায় নিজেদের জন্য সরকার গঠন করতে। জনগণের ভোটেই গঠন হবে আগামীর সরকার।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান, সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান বিজয়, বগুড়া জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম খাদেম, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম শুভ, সদস্য সচিব আবু হাসান, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বগুড়ায় তারুণ্যের সমাবেশের মূল মঞ্চের অতিথি সারিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দু’টি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। চেয়ার দু’টিতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়েছিল। সেই চেয়ারের সারিতে সমাবেশের বক্তা ও অতিথিগণ আসন গ্রহণ করে।
সমাবেশের আগে বগুড়া শহরে সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম রং বেরংয়ের ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসেন। এছাড়া বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে তারুণ্যের সমাবেশ। উত্তরের ১৬ জেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাসের বহর নিয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করেন। এসব মিছিল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়। সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহরজুড়ে পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই-জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। বাংলাদেশের জন্য বর্তমান সরকার কি করেছে? তিস্তার পানির ন্যায্য বন্টন চুক্তি করতে পারেনি। আপনারা উন্নয়নের নামে টালবাহানা, লুটপাট করেছেন। বিদ্যুৎ বিল, মোবাইল ফোন বিল, ওয়াসার পানির বিলের নামে জনগণের পকেট কাটছেন। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে এসে হরিলুট করে জনগণের মাথার উপরে সেই ঋণ বসিয়ে দিচ্ছেন। দেশের জন্য আপনারা করেছেন কি?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের এসব লুটপাটের বিরুদ্ধে তারুণ্যের এই সমাবেশ থেকে যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের দেশ গঠনের দায়িত্ব নিতে হবে। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আপনারা বাড়ি ফিরবেন। ১৯৭১ সালে এই তরুণরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছিল। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজ সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো ভয়ে ভীত না। ভীতই যদি না হবেন- তাহলে বিদেশ থেকে ফিরে এসে কেন বললেন ‘ওরা আমাকে সরিয়ে দিতে চায়’। কারা সরিয়ে দিতে চায়। কেন সরাতে চায়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই লড়াই বিএনপির লড়াই নয়। এটি সমগ্র জাতির লড়াই। এখন যুদ্ধে যাবার সময় যুবকদের। সরকার অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত কারাগারে পাঠাচ্ছে। দেশে আইনের শাসন না থাকায় ঘরে-বাইরে কারও জীবনের নিরাপত্তা নেই। নির্দোষ লোককে অপরাধী সাজিয়ে মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির ৬০০ নেতাকর্মীকে খুন, গুম করা হয়েছে। এই বিচার জনতার আদালতে হবে। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।