লন্ডনের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় নাম উঠেছে বাংলাদেশের বরিশালের মোজাম্মেল হোসেনের। তিনি একজন ব্রিটিশ আইনজীবী ও ব্রিটেনের কিউসি (কুইনস কনসাল)। ব্রিটেনে আইন পেশায় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদ হলো কিউসি (রানির রাজত্বকাল)।
মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। তাদের একজন হলেন ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হোসেন। মোজাম্মেল হোসেন চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত হলে তিনি হবেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯ জুলাই জানা যাবে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম।
মোজাম্মেল হোসেনের জন্ম বরিশালের একটি মাটির দেয়াল আর টিনের ছাদের ঘরে, যিনি ৮ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তিনি লন্ডনে পড়তে এসেছিলেন ২১ বছর বয়সে। সেই মোজাম্মেল হোসেন এখন ব্রিটেনের নামকরা ক্রিমিনাল ব্যারিস্টার।
১৯৯৫ সালে ২১ বছরে বয়সে ব্রিটেনে এসে আজ লন্ডনের মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার হাত ধরেই ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের অর্ধ শতকের গৌরবোজ্জ্বল পথচলার সর্বশেষ পালক সংযোজিত হলো। কনজারভেটিভ পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর মধ্যে তার নাম উঠে আসায় তাকে নিয়ে মাতামাতি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে।
মোজাম্মেল বলছিলেন, মেয়র সাদিক খানের ব্যর্থতার কথা, বলেছেন কীভাবে তিনি লন্ডনকে আবারো নিরাপদ করে গড়ে তুলতে চান। ৮ বছর পর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মেয়র সাদিক খানকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত তিনি।
মেয়র হলে ছুরিকাঘাত জনিত অপরাধ দমনে বিশেষ কাজ করবেন। সাদিক খানের বিতর্কিত ইউনেজ বাতিল করবেন। একইসঙ্গে পুরো শহরে লাখ লাখ গাছ লাগাবেন। গাছ লাগানোর মাধ্যমেই লন্ডনের দূষণ মোকাবিলা করবেন বলে জানান তিনি।
মোজাম্মেল খুব দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, তিনি লন্ডনের মূল্যবোধে তৈরি একজন মানুষ। এই শহরের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। এই শহর তাকে সব দিয়েছে। শহরকে নিরাপদ করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তাই সর্বস্ব দিয়ে করবেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২১ বছরে বয়সে তিনি আইন পড়তে লিভারপুল শহরে যান। তার আগে কখনো তিনি বিমানে উঠেননি। তার বাবা খুব দরিদ্র ছিলেন।
তিনি মনে করেন, ২০ বছর আগে তিনি যে সুযোগ পেয়েছেন, পূর্ব লন্ডনের অনেক ছেলে সেই সুযোগ পায় না। তিনি সেই সুযোগ তৈরি করতে চান। তার দীর্ঘ ক্রিমিনাল আইনপেশায় জড়িত থাকার কারণে তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, লন্ডনের নিরাপত্তা তিনিই ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
সাদিক খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সে কখনোই কোনো ঘটনার জন্য দায়িত্ব বা দায় নিতে চায় না।
মোজাম্মেল বলেন, তিনি খুবই হতাশ হয়েছিলেন, যেদিন জেলে থাকা ১৮ বছরের এক যুবক বলেছিল, সারা জীবন সে যে স্থিতিশীলতা খুঁজেছে, সেটা জেলের মধ্যেই সে পেয়েছে। দেশের তরুণদের মধ্যে কোনো আশা নেই। তিনি ব্রিটিশ তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে আশার আলো হয়ে থাকতে চান, সেটা ইতিমধ্যেই তার জীবন সংগ্রাম, উঠে আসার গল্পের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।