প্রিন্স হ্যারি, ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিয়ম ভেঙে পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন বহু দূরে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি এখন বাস করেন আমেরিকায়। তিনি ব্রিটেনের প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার ছোটপুত্র। সেই সূত্রেই রাজপরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলা তার স্বভাব রয়েছে। রাজপরিবারের অনেক নীতিই আগে ভাঙতে দেখা গেছে তাকে। এবারও রাজপরিবারের ইতিহাসে এই প্রথম আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেন তিনি।
লন্ডন হাই কোর্টে মঙ্গলবার প্রথম সেই সাক্ষ্যদানের দিনেই ঋষি সুনাক সরকার ও দেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশের তীব্র সমালোচনা করলেন ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি। জানালেন, যে গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে না, যে গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম সরকারের খুব কাছের হয়ে ওঠে, সেই গণতন্ত্র আসলে ত্রুটিপূর্ণ।
সাক্ষ্য দিতে গিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতিকে হ্যারি আরও বলেন, তিনি মেনে নিয়েছেন যে, সংবাদমাধ্যমের যখন তখন যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করার অধিকার আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যারা আয়কর দেন, তাদের প্রতিও এই সংবাদমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। অথচ গত ১৫ থেকে ২০ বছরে দেখা গেছে যে এ দেশের সংবাদ সংস্থাগুলো শুধুমাত্র নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য যা খুশি তা-ই করে গেছে।”
হ্যারির আরও মন্তব্য, “সেলেব্রিটিদের নানা বিষয়ে দায়ী করে থাকে সংবাদমাধ্যম। অথচ তারা নিজেরা কোনও কিছুর দায় নিতে চায় না। তারা গোটা সমাজের জন্য নীতি তৈরি করে থাকে, অথচ তাদের জন্য নীতি তৈরি করবে কে? সরকারও এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। আর ব্রিটেনের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।”
তবে একই সঙ্গে হ্যারি জানিয়েছেন, দেশের সব সাংবাদিককে তিনি একই পর্যায়ে ফেলেন না। বরং যারা নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য বছরের পর বছর ধরে অনৈতিকভাবে সাংবাদিকতা করে আসছেন, সৎ সাংবাদিকদের তিনি সেই সব অসৎ সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার অনুরোধ করেছেন। হ্যারির যাবতীয় মন্তব্য নিয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট অবশ্য মুখ খোলেনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, এ নিয়ে কিছু বলার নেই।
বুধবার ছিল হ্যারির সাক্ষ্যদানের দ্বিতীয় দিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ব্রিটিশ রাজকুমারকে আগের দিনের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল বুধবার। হ্যারি এদিন তার প্রাক্তন প্রেমিকা চেলসি ডেভির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলেছেন। আদালতকে জানিয়েছেন, চেলসির গাড়িতে একবার একটি ‘ট্র্যাকিং যন্ত্র’ আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। কোনও এক বেসরকারি গোয়েন্দা এই কাজটি করেছিলেন বলে দাবি হ্যারির। চেলসির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে মিরর গ্রুপের ট্যাবলয়েড যে শিরোনামে খবরটি করেছিল, সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন হ্যারি। জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের এই ধরনের খবর তাকে মানসিকভাবে আরও বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। ২০০৯ সালে এক প্রয়াত টিভি তারকার সঙ্গে তার ডিনারের কথা ওই ট্যাবলয়েডটি কীভাবে জানল, সে প্রশ্নও তুলেছেন হ্যারি। মিরর গ্রুপের আইনজীবীদের দাবি, রাজপরিবারের বিশ্বস্ত কোনও কর্মচারীই সংবাদ সংস্থাটিকে সেই খবর দিয়েছিলেন। তবে হ্যারির দাবি, তিনি কখন, কার সঙ্গে ডিনারে যাচ্ছেন, ঘুণাক্ষরেও রাজপরিবারের কোনও কর্মচারীর সে খবর জানার কথা নয়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স