ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাদরামাউত শহরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব। তবে হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এক দিন আগে সৌদি আরব তাদের সাম্প্রতিক দখল করা এলাকা ফেরত দিতে ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতবাদীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। সেই আহ্বানের পরদিন ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতবাদীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব। বর্তমানে ইয়েমেনের ক্ষমতায় থাকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রধান সমর্থক দেশ সৌদি আরব।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অগ্রগতি সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপর চাপ বাড়িয়েছে, যারা ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে। সরকার হল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত এবং ইরান-সমর্থিত হুথিদের সাথে যৌথ বিরোধিতা দ্বারা একত্রিত।
তবে গত কয়েক বছর ধরে তুলনামূলক শান্ত থাকা ইয়েমেনে সৌদি আরবের হামলায় নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতে ইরান, সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন শক্তি জড়িয়ে রয়েছে।
দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম অ্যাডেন ইন্ডিপেনডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, হাদরামাউতের ওয়াদি নাহবে হাদরামি এলিট ফোর্সেসের অবস্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে সৌদি বিমান বাহিনী। ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর একাংশ হাদরামি এলিট ফোর্সেস।
আমিরাত-সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) এএফপিকে বলেছে, সৌদি আরব ওই এলাকায় দুটি হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনের সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সৌদি আরবঘনিষ্ঠ এক উপজাতীয় নেতার সংঘর্ষের পরই বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হাদরামাউতের এক সামরিক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষের পর ওই উপজাতীয় নেতা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
একদিন আগে ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাদরামাউত ও মাহরা প্রদেশ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল সৌদি আরব। চলতি মাসের শুরুর দিকে এই দুই প্রদেশের দখল নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
এদিকে, ইয়েমেনে নিরাপত্তা জোরদারে সৌদি আরবের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ভিন্ন ভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিলেও দুই উপসাগরীয় মিত্র দেশ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে।
রিয়াদ বলেছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি-আমিরাতি সামরিক প্রতিনিধিদল অ্যাডেন সফর করে এবং এসটিসিকে সাম্প্রতিক দখল করা দুই প্রদেশ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। সৌদি আরবের উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ এখনও চলমান রয়েছে।
তবে সে সময় এসটিসির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, প্রতিনিধিদল তাদের নতুন দখল করা এলাকা থেকে সরে যেতে বললেও গোষ্ঠীটি তা প্রত্যাখ্যান করে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, এসটিসির অগ্রযাত্রা ‘বৃহত্তর উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং আরও বিভাজনের’ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, পূর্ণমাত্রায় আবারও যুদ্ধ শুরু হলে তা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে তিনি সব পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
২০১৪ সালে হুথিরা রাজধানী সানা থেকে সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেন বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। পরে হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তরের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। দখলে নেওয়া এসব এলাকার মধ্যে দেশটির প্রধান জনবসতি অঞ্চলও রয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুথিরা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটসমর্থিত সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এই সংঘাতে কয়েক লাখ ইয়েমেনি নিহত হয়েছেন এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ২০২২ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘর্ষের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
