হিমবাহ শূন্য হয়ে গেছে ভেনেজুয়েলা!

0
হিমবাহ শূন্য হয়ে গেছে ভেনেজুয়েলা!

জাতিসংঘ ২০২৫ সালকে ঘোষণা করেছিল ‘আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বছর’ হিসেবে। আর এই বছর একটি দেশ হয়ে গেল পুরোপুরি হিমবাহ শূন্য। আন্দিজ পর্বতমালার উপরে অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার বাসিন্দারা কস্মিনকালেও কল্পনা করেননি, হামবোল্ট গ্লেসিয়ার কখনও বিলুপ্ত হতে পারে। ওই হিমবাহ স্থানীয়দের কাছে ‘লা করোনা’ বা মুকুট নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন সেই হামবোল্ট হিমবাহ আর নেই।

তবে পরিবেশবিদদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভেনেজুয়েলার হিমবাহগুলো ক্ষয়রোগে যে আক্রান্ত হয়েছে, সেটা প্রথম বোঝা গিয়েছিল ১৯৯০ সালে। তার আগে পর্যন্ত সে দেশের মেরিদা শহর থেকে দেখা যেত সিয়েরা নেভাদার প্রায় পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতার দু’টি হিমবাহকে। গ্রীষ্মের কড়া রোদও তাদের শুভ্রতায় দাগ ফেলতে পারত না। ১৯৯০ সালের এক সকালে সিয়েরা নেভাদার ক্ষুদ্রতম হিমবাহ ‘লা কোঞ্চা’র মধ্যে একটি বিরাট ফাটল প্রথম বার লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তার কয়েক মাসেক মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল লা কোঞ্চা।

তখনই পরিবেশবিদদের একাংশ প্রমাদ গুনেছিলেন। তাদের মনে হয়েছিল, দেশের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট বলিভারও একই পথ অনুসরণ করবে। ‘চির তুষারের শহর’ মেরিদাতে সেই সময়ে কেউ ভাবতেও পারেননি যে, সিয়েরা নেভাদা তার ওই ‘সাদা চাদর’ ছাড়া কখনও থাকতে পারে। আশা করা হয়েছিল, পরবর্তী বর্ষার পরে আবার হিমবাহ তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। বরং তার পরের ৩৫ বছরে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়েছে সে দেশের হিমবাহগুলোর দৈর্ঘ্য।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সিয়েরা নেভাদা দি মেরিদা অঞ্চলে এক সময়ে হিমবাহের সংখ্যা ছিল ছয়। ২০১১ সালের মধ্যে পাঁচটি হিমবাহ অদৃশ্য হয়ে যায়, টিকে ছিল শুধু হামবোল্ট হিমবাহটি। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, হিমবাহটির এলাকা এখন বর্তমানে ২ হেক্টরেরও কম। ফলে সেটি আর হিমবাহ নেই, তুষার ক্ষেত্র হয়ে গিয়েছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং আবহাওয়া ইতিহাসবিদ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা বলছেন, বহু দেশ ১২ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে, চতুর্থ তুষারযুগের শেষে তাদের হিমবাহ হারিয়েছিল। তবে আধুনিক যুগে ভেনেজুয়েলাই সম্ভবত প্রথম দেশ, যারা হিমবাহশূন্য হয়ে গেল।’ হেরেরার মতে, আগামী দিনে ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো এবং স্লোভেনিয়াও তাদের হিমবাহ হারাতে চলেছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, হামবোল্ট হিমবাহে এখন নতুন করে বরফ জমার কোনও জায়গা নেই। ‘এল নিনো’ জলবায়ু পরিস্থিতির প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে নিরক্ষীয় হিমবাহের বিলুপ্তি ত্বরাণ্বিত করছে। ভেনেজুয়েলার আন্দিজ অঞ্চলের তাপমাত্রা এখন ওই জায়গার গড় তাপমাত্রার তুলনায় ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এটা খুবই অস্বাভাবিক বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হিমালয় পর্বতমালার বিস্তীর্ণ এলাকায় হিমবাহগুলো যে ভাবে গলতে শুরু করেছে, তাতে পৃথিবীর অন্য কোনও জায়গার হিমবাহই আর ‘নিরাপদ’ নয়। তবে যে বছরটাকে ‘হিমবাহ সংরক্ষণের বছর’ বলে বেছে নেওয়া হয়েছিল, সে বছরই ভেনেজুয়েলার এমন ভাবে হিমবাহ শূন্য হয়ে যাওয়া পরিবেশের পক্ষে একটা বড় ধাক্কা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here