ডানা মেলে শূন্যে ভেসে শিকারে পটু শঙ্খচিল

0
ডানা মেলে শূন্যে ভেসে শিকারে পটু শঙ্খচিল

মুক্ত আকাশে ডানা মেলে শূন্যে ভেসে বেড়ায় শঙ্খচিল। শিকারের জন্য চোখ রাখে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অপেক্ষায় থাকে নিখুঁত মুহূর্তের। সুযোগ মিললেই হঠাৎ ডানা গুটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। নিখুঁত কৌশল আর ধৈর্যই যেন তার শক্তি।

শঙ্খচিল কবি-সাহিত্যিকদের কলমে বহুবার উঠে এসেছে। এক সময় গ্রামবাংলায় জোড়ায় জোড়ায় উড়ে বেড়াতে দেখা গেলেও বর্তমানে আগের মতো চোখে পড়ে না এই চেনা পাখিটি।

শঙ্খচিল অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae) পরিবারের সদস্য। শঙ্খচিল (ইংরেজি: Brahminy Kite) বাংলাদেশে একটি অতি পরিচিত শিকারি পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এদের বিস্তৃতি রয়েছে। শঙ্খচিলের বৈজ্ঞানিক নাম Haliastur indus।

পূর্ণবয়স্ক শঙ্খচিলের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৭৬ থেকে ৮৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা মূলত জীবিত মাছ ও জলজ প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে। এছাড়াও ছোট সাপ, হাঁস-মুরগির বাচ্চা এদের প্রিয় খাদ্য। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শঙ্খচিলের প্রজননকাল। দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় আগস্ট থেকে অক্টোবর এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এদের প্রজননকাল দেখা যায়।

শঙ্খচিল সাধারণত উঁচু স্থানে বাসা বাঁধে। ছোট ডাল ও শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাসা তারা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেয় স্ত্রী পাখিটি, তবে বাচ্চা লালন-পালনে মা ও বাবা দুজনেই অংশ নেয়। প্রায় ২৬ থেকে ২৯ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

এই পাখিটির ডানায় লালচে, সর রং, বাদামি ও কালোর মিশ্রণ দেখা যায়। দেহের নিচের অংশে থাকে বহু রেখা। লেজ ও ডানার দৈর্ঘ্য প্রায় সমান। নদী-নালা ও জলাশয়ের আশপাশে শঙ্খচিলের বিচরণ বেশি। গ্রামাঞ্চলে এরা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে, তবে বড় জলাশয়ের পাশে ও সুন্দরবনে ঝাঁকে ঝাঁকে বসবাস করে। সুযোগ পেলে জেলে নৌকা কিংবা ট্রলার অনুসরণ করতেও দেখা যায়।

কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত সনেট “আবার আসিব ফিরে”-তে শঙ্খচিলের উল্লেখ পাখিটিকে সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় করে রেখেছে। এছাড়াও শঙ্খচিলকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে বহু সাহিত্যকর্ম। ২০১৬ সালে ভারতে ‘শঙ্খচিল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যার পরিচালক ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা গৌতম ঘোষ।

সম্প্রতি সুন্দরবন থেকে শঙ্খচিলের একটি চমৎকার ছবি তুলেছেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার, কবি ও সাহিত্যিক রানা মাসুদ। তিনি বলেন, ‘ছবিটি তোলার সময় মনে হয়েছিল পাখিটি যেন টার্গেট লক করে শিকার ধরার জন্য ফাইনাল ডাইভ দিচ্ছে। জীবনও অনেকটা এমনই। আগে লক্ষ্য স্থির করতে হয়, তারপর সেই লক্ষ্য অনুযায়ী চেষ্টা। কিছু কিছু ছবি তোলার পর ভেতরে এক ধরনের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে এটিও তেমনই একটি ছবি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here