হ্রাস পাচ্ছে কানাডার জনসংখ্যা

0
হ্রাস পাচ্ছে কানাডার জনসংখ্যা

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমানোর সরকারি পদক্ষেপের ফলে সাম্প্রতিক প্রান্তিকে কানাডার জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন নির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করা দেশটির জন্য এটি একটি বড় মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

বুধবার স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা প্রকাশিত নতুন হিসাব অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে কানাডার জনসংখ্যা ০.২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখে। ১ জুলাই এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার।

কানাডার ইতিহাসে এর আগে মাত্র একবারই ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জনসংখ্যা কমেছিল ২০২০ সালে, যা ছিল কোভিড-১৯ মহামারির সময় সীমান্ত বন্ধ থাকার ফলে।

তবে এবারের পতনের প্রধান কারণ হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া। অটোয়া সরকার পড়াশোনার অনুমতিপত্র (স্টাডি পারমিট) দেওয়ার সংখ্যা কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন হ্রাস পেতে শুরু করে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর শাসনামলে কানাডায় রেকর্ড পরিমাণ অভিবাসন হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসনকে অনেকের কাছে ‘অস্থিতিশীল’ মনে হওয়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ বাড়ে। এর জেরে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি দ্রুত নীতিগত পরিবর্তনের পথে হাঁটে।

২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ত্রৈমাসিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছিল। মাত্র তিন মাসে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছিল দেশটির জনসংখ্যায়।

বর্তমানে কানাডার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ দশমিক ৮ শতাংশই অস্থায়ী বাসিন্দা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ অস্থায়ী বাসিন্দার হার মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

এই লক্ষ্য পূরণে সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা বড় পরিসরে কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৫ সালে নতুন শিক্ষার্থী আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৯০০, ২০২৬ সালে কমিয়ে আনা হবে ১ লাখ ৫৫ হাজারে এবং ২০২৭ ও ২০২৮ সালে রাখা হবে ১ লাখ ৫০ হাজার।

একই সঙ্গে সরকার স্থায়ী অভিবাসীর সংখ্যা ধীরে বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে। সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে স্থায়ী বাসিন্দা ৩ লাখ ৯৫ হাজার, ২০২৬ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ও ২০২৭ সালে ৩ লাখ ৬৫ হাজার।

অর্থমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শঁপেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডা ‘অভিবাসীদের স্বাগত জানানো ও প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার সক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে।’

ব্যাংক অব মন্ট্রিয়ালের অর্থনীতিবিদ রবার্ট কাভচিচ এক বিশ্লেষণে বলেন, ‘কানাডায় একটি বড় জনসংখ্যাগত সমন্বয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা এখন দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গল্পগুলোর একটি।’

তিনি আরও বলেন, অস্থায়ী বাসিন্দার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি রাখতে হবে, এরপর দীর্ঘমেয়াদে তা ১ শতাংশের নিচে স্থিতিশীল হতে পারে।

নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আলবার্টা ও নুনাভুত ছাড়া কানাডার সব প্রদেশ ও অঞ্চলেই জনসংখ্যা কমেছে। এই দুই অঞ্চলে জনসংখ্যা ০ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here