বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন নিশ্চিত করতে প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পেশাদার কূটনীতিককে প্রত্যাহার করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তবে সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে।
যেসব কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে তাদের তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
সোমবার দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই পদক্ষেপ ‘যে কোনও প্রশাসনের জন্য এ এক নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া’। যদিও সমালোচকরা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্রদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, “একজন রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি। আর দেশগুলোতে আমেরিকা সর্বাগ্রে কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তিরা থাকবেন, সেটি নিশ্চিত করার অধিকার প্রেসিডেন্টের আছে।”
বিষয়টি সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল তারা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনে ফিরে আসার নির্দেশ যাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক রয়েছেন। তাদেরকে ছোট দেশগুলোতে পদায়ন করা হয়েছিল, যেখানে শীর্ষ মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে ঐতিহ্যগতভাবে পররাষ্ট্রদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়োগ পান; যারা আদতে পেশাদার কূটনীতিক, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রত্যাহার করা কূটনীতিকদেরকে পররাষ্ট্রদপ্তরে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এই কূটনীতিকদের কয়েকজনকে কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই ফোনে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছিল। এরপর পররাষ্ট্রদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ জানায়, কোন সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র নিকি গেমার কূটনীতিক প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়াকে ‘খুবই অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
এক ই–মেইলে তিনি বলেন, “হঠাৎ কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই কূটনীতিক প্রত্যাহার করার এই প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক অন্তর্ঘাত ও রাজনীতিকরণের সেই একই নমুনার প্রতিফলন, যা আমাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী,ইতোমধ্যেই মনোবল, কার্যকারিতা এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
গেমারের এই বক্তব্যের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তর।
গত শুক্রবার পররাষ্ট্রদপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পলিটিকো পত্রিকা জানিয়েছিল, দুই ডজন রাষ্ট্রদূতকে তাদের পদ ছাড়তে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে তার পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো বাস্তবায়নে বাধার মুখে পড়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে নিজের অনুগতদের বসানোর চেষ্টা করে আসছেন।
তবে প্রায় ৮০টি রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য থাকার পরও একযোগে বেশিসংখ্যক কূটনীতিক প্রত্যাহারের ঘটনায় রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্রেট জিন শাহীন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় যে-ই থাকুক, তার তোয়াক্কা না করে বিশ্বস্তভাবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া যোগ্য পেশাদার রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব চীন ও রাশিয়ার হাতে তুলে দিচ্ছেন। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র কম নিরাপদ, কম সমৃদ্ধশালী এবং দুর্বল হচ্ছে।”

