তুরস্ককে রুখতে ইসরায়েল-গ্রিস জোট, এরদোয়ানের কড়া বার্তা

0
তুরস্ককে রুখতে ইসরায়েল-গ্রিস জোট, এরদোয়ানের কড়া বার্তা

জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ নতুন করে চড়তে শুরু করেছে। গ্রিস, ইসরায়েল এবং গ্রিক সাইপ্রাস প্রশাসনের এই বৈঠককে নিছক কূটনৈতিক আলাপচারিতা হিসেবে না দেখে বরং তুরস্কের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত বলয় তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। 

এই অঞ্চলের বিপুল অফশোর গ্যাস ভাণ্ডার এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের পাইপলাইন করিডোর বর্তমানে কৌশলগত প্রতিযোগিতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তুর্কি বিশ্লেষক গোকচে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস ‘ইস্টমেড’ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন, ‘গ্রেট সি ইন্টারকানেক্টর’ বিদ্যুৎ লাইন এবং ‘ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর’ (আইএমইসি) নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

আঙ্কারার সমাজবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এমেতে গজুজেলেলি মনে করেন, জেরুজালেমকে সম্মেলনের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়াটা প্রতীকী এবং এই জ্বালানি প্রকল্পগুলোর মূল লক্ষ্য হলো ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’র দোহাই দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাসকে (টিআরএনসি) পুরোপুরি কোণঠাসা করা। তাঁর মতে, এটি আঙ্কারার ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ মতবাদের স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করার একটি সুপরিকল্পিত কৌশল।

জ্বালানি সহযোগিতার আড়ালে বড় ধরনের সামরিক প্রস্তুতিও চলছে। গ্রিস সম্প্রতি ইসরায়েলের সহায়তায় ‘একিলিস শিল্ড’ নামক একটি বহু-বিলিয়ন ইউরোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এটি তুরস্কের সীমান্ত এবং ইজিয়ান সাগর জুড়ে মোতায়েন করা হবে। গ্রিসের বিশ্লেষক সেরবোস স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ইসরায়েলের সাথে এই গভীর সামরিক সহযোগিতা আঙ্কারার নৌ-আধিপত্য বা ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ নীতিকে প্রতিহত করার জন্যই অপরিহার্য। এছাড়া আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ বড় ধরনের অস্ত্র চুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইস্তাম্বুলে এক নৌ-কুচকাওয়াজে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তুরস্ক প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় এবং কোনো দেশের ভূখণ্ডের প্রতি তাদের উচ্চাভিলাষ নেই।

 তবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তুরস্ক তার সার্বভৌমত্ব বা অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। এরদোয়ান জোর বলেন, তুরস্কের সকল সামরিক বিনিয়োগ যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য নয় বরং নিজেদের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ রক্ষার স্বার্থেই করা হচ্ছে। গাজার সংঘাত ছাপিয়ে এখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরের জ্বালানি রাজনীতি ও সামরিক সমীকরণই এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখছে।

সূত্র: আর সাবাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here