বিজেএমসির (বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতাদি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং বিজেএমসির নিজস্ব অফিস ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান ‘করিম চেম্বার’ ভবন অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রদান না করে বিজেএমসির ‘অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন’ নির্মাণের অনুমতি প্রদানের জন্য বাপাশিকস ও সিবিএ’র পক্ষ থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিব বরাবরে গত ১৮ নভেম্বর তারিখে আবেদন প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু রবিবার (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি বিধায় নিম্নোক্ত দাবিসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে বিজেএমসি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এদিন সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ের মেইন গেটে একটি গেট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি জুটমিলের অফিস গেটে একই কর্মসূচি পালিত হয়।
গেট মিটিংয়ে বিজেএমসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। সভায় বিজেএমসি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, বিগত সরকার ২০২০ সালের ১ জুলাই বিজেএমসির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিকদেরকে গোল্ডেন হ্যান্ডশ্যাকের মাধ্যমে চাকরি অবসায়ন করে এবং উদ্বৃত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র আত্তীকরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ৫ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও আত্তীকরণ কার্যক্রম বিভিন্ন কারণে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। যা এখনো চলমান রয়েছে। মিল বন্ধ পরবর্তীতে প্রায় ৪ বছর বিজেএমসির মজুত পণ্য বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। গত ৮-৯ মাস যাবৎ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনোরকমের অর্থ বরাদ্দ না করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই আর্থিক সংকটের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানান তারা।
এ ছাড়া বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালের পর থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বাবদ সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ না করায় শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি থেকে অবসর গিয়ে আর্থিক সংকটের কারণে বিনা চিকিৎসায় অনাহারে ও অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়া এমনকি ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না। কাজেই মানবিক কারণে অবসরপ্রাপ্তদের ন্যায্য আনুতোষিক পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজেএমসি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন এবং সর্ববৃহৎ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে ঢাকা শহরে বিজেএমসির নিজস্ব কোনো অফিস ভবন নেই। বর্তমানে বিজেএমসির ব্যবহৃত আদমজী কোর্ট ভবনটি একসময় বিজেএমসির মালিকানাধীন থাকলেও কত কয়েক বছর আগে এ ভবনটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। ফলে বিজেএমসি এখন ভাড়াটিয়া হিসেবে এ ভবনে অবস্থান করছে। ঢাকা শহরে বিজেএমসির একমাত্র জায়গা ৯৯, মতিঝিল, করিম চেম্বার ভবনটি ভেঙে নতুন একটি ‘অফিস ভবন কাম বাণিজ্যিক ভবন’ দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ও লালিত স্বপ্ন ছিল। বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক করিম চেম্বার ভবনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছে, যা বিজেএমসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনোদিন বাস্তবায়ন হতে দেবে না। বিজেএমসির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী একমাত্র প্রাণের দাবি তাদের নিজস্ব জায়গা করিম চেম্বারে বিজেএমসির নিজস্ব অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার সদয় অনুমতি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
উল্লিখিত দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিজেএমসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
গেট মিটিং শেষে বিজেএমসি প্রধান কার্যালয় ও মিলগুলোর প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবি-সংবলিত একটি স্মারকলিপি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণের জন্য বিজেএমসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
দাবিগুলো হলো-
১। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রদান;
২। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক পরিশোধের জন্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রদান;
৩। বিজেএমসির উদ্বৃত্ত জনবল অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
৪। বিজেএমসির নিজস্ব অফিস ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান ‘করিম চেম্বার’ ভবন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রদানের কার্যক্রম বন্ধ করে বিজেএমসির অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে সরকারের অনুমতি প্রদান।

