নরসিংদীতে ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক আহত

0
নরসিংদীতে ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক আহত

নরসিংদীতে ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে নারী–পুরুষ মিলে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সারাদেশের মতো নরসিংদীতেও ভূমিকম্প অনুভূত হলে পুরো জেলা কেঁপে ওঠে। বিশেষত পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকা ও নরসিংদী শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।

গাবতলী এলাকায় একটি ছয়তলা নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে নিচের বাড়ির ওপর পড়ে বাড়ির মালিক দেলোয়ার, ছেলে ওমর, মেয়ে তাসফিয়া গুরুতর আহত হন। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাবা–ছেলেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা–ছেলের মৃত্যু হয়।

পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে চাপা পড়ে কাজম আলী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া।

ভূমিকম্পের পর ঘোড়াশাল এলাকায় ৬টি বাড়ি ও এস এ প্লাজা নামে সাততলা শপিংমলের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। বাজার এলাকার নানা ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে ক্ষতি হয়। পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের আঙিনার মাটিও দেবে যায়।

ঘোড়াশাল বাজারের জুতার দোকানি আলম মিয়া জানান, “ভূমিকম্প শুরু হতেই দোকানের সব জুতা আর মালামাল মেঝেতে পড়ে ভেঙেচুরে গেছে।”

মুদি দোকানি আসলাম মিয়া বলেন, “আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি এটা ভূমিকম্প। মনে হয়েছিল কেউ হামলা করেছে। পরে বুঝলাম—এটা কম্পন।”

ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কুরআন সুন্নাহ মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি সালা উদ্দিন আনসারী বলেন, “ছয়তলা ভবনের চার–পাঁচ জায়গায় ফাটল ধরেছে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।”

ভবনের মালিক আমানউল্লাহ বলেন, “ভূমিকম্পে ভবনের কয়েক জায়গায় ফাটল হয়েছে। সব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে ভাড়াটিয়ারা। কেউ ভয় পাচ্ছে দোকান খুলতে।”

এদিকে ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে যায়। অন্য ট্রান্সফরমারগুলোর বেশিরভাগ সংযোগ ভেঙে পড়ে। পলাশ ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুস সহিদ বলেন, “খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হককে ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘোড়াশালসহ পলাশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে ঘোড়াশাল অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশানা কবির বলেন, “অর্ধশতাধিক নারী–পুরুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো অনেকে আসছেন।”

দুপুরে পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম গাবতলী এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “ভূমিকম্পে জেলায় অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। যেকোনো দুর্যোগে জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক।”

বিডী প্রতিদিন/আশিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here