আমেরিকার চাপে রুশ তেল আমদানি বন্ধ করলেন মুকেশ আম্বানি

0
আমেরিকার চাপে রুশ তেল আমদানি বন্ধ করলেন মুকেশ আম্বানি

মার্কিন চাপের মুখে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিল ভারতের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (আরআইএল)। চলতি বছরের ২০ নভেম্বর সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তারা গুজরাটের জামনগরস্থিত শোধনাগারের জন্য আপাতত আর রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে না।

রিলায়্যান্সের শোধনাগারের যে ইউনিটটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)-এ অবস্থিত সেটি থেকেই মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে এবং আমেরিকায় পেট্রোপণ্য রফতানি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি রুশ তেলের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়ে সংস্থাটি। এই পরিস্থিতিতে রফতানি বাণিজ্য নির্বিঘ্ন রাখতে এবং সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মস্কোর থেকে ‘তরল সোনা’ আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুকেশ অম্বানীর নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে যে, রুশ তেলের পুরনো মজুত শেষ হয়ে গেলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তারা আর রাশিয়া থেকে উৎপাদিত পেট্রোপণ্য রফতানি করবে না। ২০ নভেম্বর থেকেই আরআইএলের এসইজেড শোধনাগারে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে মজুত থাকা কাঁচা তেল প্রক্রিয়াকরণের কাজ এখনও চলছে। রিলায়্যান্সের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হলো, আমেরিকার চাপানো নিষেধাজ্ঞা। চলতি বছরের অক্টোবরেই রাশিয়ার বৃহত্তম দুই তেল উৎপাদনকারী সংস্থা রসনেফ্ট এবং লুকঅয়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। ২১ নভেম্বর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে কোনো সংস্থা এদের থেকে তেল কিনলে সেই সংস্থার উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে পারে।

রিলায়্যান্সের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি বিশাল বড় বাজার। এতোদিন পরিশোধিত রুশ তেল ইইউর বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে সংস্থাটি বিপুল মুনাফা করছিল। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল থেকে উৎপাদিত জ্বালানি আমদানি ও বিক্রি সীমিত করার ব্যবস্থাও নিয়েছে ইইউ। ইউরোপের বাজার ধরে রাখতে রিলায়্যান্স এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, রিলায়্যান্সের সঙ্গে ‘রসনেফ্ট’-এর দিনে পাঁচ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য ২৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এবং ব্যবসার পথে কোনো বাধা না আসুক তা নিশ্চিত করতে আপাতত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রুশ সংস্থাগুলিকে নতুন করে তেলের বরাত দিচ্ছে না তারা। সূত্রের খবর, নিষিদ্ধ সংস্থাগুলির কাছ থেকে তেল কিনলে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে সমস্যা হতে পারে রিলায়্যান্সের।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ১২ নভেম্বর রাশিয়া থেকে শেষবার তেল আমদানি করা হয়েছিল। তবে দেশীয় বাজারে বিক্রির জন্য ব্যবহৃত শোধনাগার ইউনিটটিতে (ডিটিএ) ২০ নভেম্বরের পর আসা রুশ জ্বালানি পণ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াজাত করা হবে। অন্যদিকে, এসইজেড ইউনিটে ডিসেম্বরের পর থেকে রফতানির জন্য আর রুশ তেল ব্যবহার করা হবে না। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির পরিসংখ্যান ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখনও রুশ তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার এবং চলতি অর্থবর্ষে ভারতের রুশ তেল আমদানি আরও বাড়তে পারে। তবে রিলায়্যান্স আপাতত তাদের অশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে তেল কেনার পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here