সেই মুন্না আজ মৃত্যুর মুখে

0
সেই মুন্না আজ মৃত্যুর মুখে

মানবতার দৃষ্টান্ত ৪২ বছর বয়সী মনিরুল ইসলাম মুন্না—যিনি একসময় বাম কিডনি দান করেছেন, রক্ত দিয়েছেন ৫৬ বার, মৃত্যুর পর দান করেছেন নিজের চোখও। অথচ সেই দাতা মানুষটিই আজ বাঁচার লড়াইয়ে পরাজয়ের কাছাকাছি। তার বাকি কিডনিটিও অকেজো হয়ে গেছে; নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

কুমিল্লা নগরীর নতুন চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুন্না পেশায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। মৃত আহসানুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের একমাত্র ছেলে তিনি।

সরেজমিনে তার বাসা ও কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সাদা বেডে শুয়ে ফ্যাকাশে মুখে জীবন আঁকড়ে ধরছেন মুন্না। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতিবার খরচ পড়ছে ২৮০০ টাকা। প্রতিদিন ওষুধের খরচ আরও প্রায় ২০০০ টাকা। টাকার অভাবে কখনও ডায়ালাইসিস বাদ পড়ে; তখন পায়ে পানি নামে, শ্বাসকষ্ট বাড়ে, কাশি তীব্র হয়।

দুই ছোট মেয়ে বাবার সঙ্গে খুনসুটি করে বেড়ায়, কিন্তু বাবার প্রাণসংকট সম্পর্কে কিছুই জানে না। মুন্না তাদের কপালে আদর করে চুমু দেন; দূরে দাঁড়িয়ে মা আনোয়ারা বেগম ও স্ত্রী তানিয়া চোখ মুছেন। পরিবারের কারও স্থায়ী আয় নেই। বাড়িতে শুধু একটি বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই।

২০১৫ সালে নগরীর রানীর বাজার এলাকার ফজলুল হকের ছেলে নাজমুল হাসান সুমনকে কিডনি দান করেছিলেন মুন্না। সুমনের বাবাকেও তিনি রক্ত দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন সমস্যা না থাকলেও চলতি বছরে হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, লাখে একজন দাতার এমন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

সহায়তার আশায় তিনি কুমিল্লা শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করেছেন।

মুন্নার মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার দুই ছেলের একজন মারা গেছে, স্বামীও নেই। মুন্নাই পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার দুই ছোট মেয়ে আছে। একজন তো মাত্র কথা বলা শিখছে। কেউ যদি তাকে একটি কিডনি দান করে—আমার ছেলেটা বেঁচে যাবে।

প্রতিবেশী মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক বলেন, মানুষের জন্য তার হৃদয়ে মমতা অপরিসীম। কিডনি, রক্ত ও চোখ দানের মতো উদাহরণ বিরল। সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত।

আরেক প্রতিবেশী আবদুল আলীম বলেন, মুন্না খুবই বিনয়ী মানুষ। তার মতো মানুষেরা সমাজের জন্য সম্পদ। সাহায্য পেলে একটি পরিবার বেঁচে যাবে।

কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাকসুদ উল্লাহ বলেন, তার এক কিডনি আগে দান করা। অন্যটিও অকেজো হয়ে গেছে। কেউ যদি কিডনি দান করেন, তিনি ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন। না হলে ডায়ালাইসিসই ভরসা—যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কুমিল্লা শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা তার আবেদন পেয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here