বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এরই মধ্যে তিনি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ২০১৮ সালের পর যুবরাজের এই প্রথম সফরটি সৌদি ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রমাণস্বরূপ, সৌদি আরবের কাছে ৪৮টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প।
বহু বছর ধরেই এটি কেনার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। তবে ইসরায়েলের বিরোধিতার কারণে পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন তাতে রাজি হয়নি।
এফ-৩৫ আসলে কী?
এফ-৩৫ হলো পঞ্চম প্রজন্মের এক আসনের, এক ইঞ্জিনের স্টেলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। এটি আকাশে প্রাধান্য বিস্তার, স্ট্রাইক মিশন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম। এফ-৩৫ লাইটনিং-২ কে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ফাইটার জেট হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষত্ব: এটি এমন একটি স্টিলথ ফাইটার, যা রাডার ও অন্যান্য প্রযুক্তির দ্বারা শনাক্তকরণ এড়াতে সক্ষম।
কার্যকারিতা: এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমানগুলোকে উৎক্ষেপণের আগেই আক্রমণ করতে পারে, যার ফলে এটি যেকোনও সংঘাতে আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এফ-৩৫ এর ধরন
১. এফ-৩৫এ: এটি নিয়মিত রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে। অস্ত্র ও জ্বালানি জেটের বডির মধ্যে থাকে, যা এর গোপন ক্ষমতা বজায় রাখে।
২. এফ-৩৫বি: এটি হেলিকপ্টারের মতো স্বল্প সময়ে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে সক্ষম। ছোট বিমানঘাঁটি থেকে পরিচালনার জন্য ভালো। ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি ব্যবহার করে।
৩. এফ-৩৫সি: এটি সুপারসনিক, মার্কিন নৌবাহিনীর বিমান। এটি বিমানবাহী বাহকগুলোতে ব্যবহারের জন্য তৈরি। দীর্ঘ পাল্লার স্টিলথ অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলোর এত বিশেষত্ব কেন?
এফ-৩৫ নির্মাতা লকহিড মার্টিন এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী, শক্তিশালী ও সংযুক্ত যুদ্ধবিমান হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও, এই যুদ্ধবিমানটি ৩৬০-ডিগ্রি ক্যামেরা স্যুট ও অন্যান্য সেন্সর থেকে সরাসরি পাইলটকে তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এর ফলে বিমান শক্তি ব্যবহারের কৌশলে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন বেশি গতির ওপর জোর না দিয়ে প্রথমে হুমকি শনাক্ত করা, সেই তথ্য বাহিনীর মধ্যে ভাগ করে নেওয়া ও অন্যান্য সামরিক সম্পদের সঙ্গে আক্রমণ সমন্বয় করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সৌদি আরব কেন এটি চায়?
সৌদি আরব ইতোমধ্যেই মার্কিন অস্ত্রের একটি শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা। দেশটির এফ-৩৫ কিনতে আগ্রহী হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো-
বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন: এটি ক্রয় করলে সৌদি আরব তার নিজস্ব বিমান বাহিনীকে উন্নত করতে ও মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলা: যদিও বর্তমানে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক, তবুও রিয়াদ ও তেহরান পূর্বে একে অপরকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। এফ-৩৫ পেলে তারা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
হুথি বিদ্রোহ: সৌদি আরব পূর্বে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে, যা ভবিষ্যতে আবারও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ক্রয় করলে তাদের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে।
এফ-৩৫ আছে এমন দেশের সংখ্যা ও পরিসংখ্যান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে এক হাজার ৭৬৩টি। এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান আছে ২৮০টি এবং এফ-৩৫সি যুদ্ধবিমান আছে ৪১৩টি। (২০২৫ সালের ১৮ নভেম্বরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী)
যুক্তরাজ্যের কাছে এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান আছে ১৩৮টি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ১০০টি। ইতালির কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ৭৫টি, এফ-৩৫বি যুদ্ধ বিমান আছে ৪০টি। কানাডার কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ৮৮টি। নেদারল্যান্ডসের কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ৫৭টি। নরওয়ের কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ৫২টি।
এছাড়া ডেনমার্কের কাছে ৪৩টি, জাপানের কাছে ১০৫টি এফ-৩৫এ এবং এফ-৩৫বি ৪২টি, ইসরায়েলের ৭৫টি, ফিনল্যান্ডের ৬৪টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ৬০টি, সুইজারল্যান্ডের ৩৬টি, জার্মানির ৩৫টি, বেলজিয়ামের ৩৪টি, পোল্যান্ডের ৩২টি, রোমানিয়ার ৩২টি, চেক প্রজাতন্ত্রের ২৪টি, গ্রিসের ২০টি ও সিঙ্গাপুরের কাছে এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান আছে ৮টি এবং এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান আছে ১২টি।
মার্কিন কংগ্রেস কি এই বিক্রয় অনুমোদন দেবে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদন থাকলেও মার্কিন কংগ্রেসের অস্ত্র বিক্রি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা আছে। তবে ট্রাম্প তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ও যুবরাজ মোহাম্মদের উপস্থিতিতে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, তিনি সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবেন।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, সৌদি আরবকেও ইসরায়েলের মতো একই ধরনের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া হবে। যদিও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়নি রিয়াদ, তবুও কয়েক দশকের পুরানো মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। সূত্র: আল-জাজিরা

