যুক্তরাজ্যে সেই চীনা ক্রিপ্টোকুইনের ১১ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড

0
যুক্তরাজ্যে সেই চীনা ক্রিপ্টোকুইনের ১১ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড

অর্থপাচার, বিনিয়োগ প্রতারণার অর্থ বিটকয়েনে রূপান্তরের অভিযোগে এক চীনা নারীকে ১১ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। 

মঙ্গলবার সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট তার বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন। তার নাম কিয়ান ঝিমিন। বয়স ৪৭। 

জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি পাউন্ডের বিটকয়েন নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ওই নারী।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে কিয়ান ঝিমিন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ভুয়া পাসপোর্টে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন। দেশটিতে পাড়ি জমানোর পর উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় এক বিলাসবহুল প্রাসাদবাড়ি ভাড়া নেন মাসে প্রায় ১৭,০০০ পাউন্ড (প্রায় ২২,৭০০ ডলার) ভাড়ায়। এক বছর পর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং বিপুল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ করে। ব্রিটেনের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো জব্দ অভিযান হিসেবে গণ্য হয় ঘটনাকে। 

পুলিশ জানিয়েছে, চীনের এক লাখেরও বেশি মানুষ তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। কোম্পানির নাম ছিল লানতিয়ান গেরুই। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করত, তারা উচ্চপ্রযুক্তির স্বাস্থ্যপণ্য তৈরি করছে এবং বিটকয়েন মাইনিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেবে। কিন্তু বাস্তবে, সব অর্থই আত্মসাৎ করা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষের তদন্ত শুরু হওয়ার পর তিনি পালিয়ে যান ব্রিটেনে। সেখানে তিনি নিজেকে  ‘অ্যান্টিকস ও হীরার ব্যবসায়ী ধনকুবের উত্তরাধিকারিণী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি এক সাবেক টেকঅ্যাওয়ে রেস্তোরাঁ কর্মী ওয়েন জিয়ান’কে নিজের সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। তাকে দায়িত্ব দেন বিটকয়েনগুলো নগদ অর্থ বা সম্পত্তিতে রূপান্তর করার। পরবর্তীতে ওয়েন জিয়ান মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড পান। আদালতে তিনি বলেন, কিয়ান ঝিমিন দিনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে অনলাইন গেম খেলতেন আর শপিং করতেন একজন সত্যিকারের ‘ডিজিটাল বিলাসবহুল রানি’র মতো।

তবে তার ডায়েরিতে পুলিশ আরও অবাক করা তথ্য পায়। তা হলো- একটি ছয় বছরের পরিকল্পনা। সেখানে তিনি একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সুইডেনে একটি দুর্গ কেনা, এমনকি এক ব্রিটিশ ডিউকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল লিবারল্যান্ড নামের এক ক্ষুদ্র স্বীকৃতিহীন রাষ্ট্রের রানি হওয়া, যা ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। হ্যাম্পস্টেডে বিলাসবহুল জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি লন্ডনের আরও বড় এক প্রাসাদ কেনার চেষ্টা করেন টটারিজ কমন এলাকায়। কিন্তু তার সহকারী ওয়েন সেই অর্থের উৎস ব্যাখ্যা করতে না পারায় পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। অবশেষে, পুলিশের অভিযানে তার বাড়ি থেকে একাধিক হার্ডড্রাইভ ও ল্যাপটপ উদ্ধার হয়। সেগুলোতে হাজার হাজার বিটকয়েন সংরক্ষিত ছিল। বর্তমান বাজারমূল্যে যা প্রায় ৫০০ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণ।

কিয়ান ঝিমিনের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু চীনা বিনিয়োগকারী এখন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছেন যেন এই ক্রিপ্টো সম্পদ বিক্রি করে তাদের কিছু অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক ভুক্তভোগী মি. ইউ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিয়ে ভেঙে গেছে এই প্রতারণার কারণে। আমরা আশা করি ব্রিটিশ সরকার, ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস এবং হাইকোর্ট সহানুভূতি দেখাবে। কারণ এখন কেবল এই বিটকয়েনই আমাদের ক্ষতির কিছুটা ফেরত দিতে পারে। যদি কোনও অর্থ দাবিহীন থাকে, তবে তা সাধারণত ব্রিটিশ সরকারের তহবিলে চলে যায়। ফলে অনেকেই অনুমান করছেন, সরকার হয়তো এই জব্দ অর্থ থেকে বিশাল আর্থিক সুবিধা পেতে পারে।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডিটেকটিভ কনস্টেবল জো রায়ান বলেন, আমরা যত গভীরে গিয়েছি, ততই স্পষ্ট হয়েছে-  তিনি শুধু নিচুস্তরের সদস্য নন, পুরো প্রতারণার মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, চতুর এবং প্রভাবশালী। সহজেই বহু মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম। সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here