জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সমাবেশ। দুপুর ২টায় রাজধানীর পল্টনে এ সমাবেশ হতে যাচ্ছে।
জামায়াত থেকে আগেই বলা হয়েছে, ‘দাবি মেনে না নিলে আগামী ১১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।’ এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এক সপ্তাহের সময় গতকাল সোমবারই শেষ হয়ে গেছে।
এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় সরকারের। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোও নিজেদের অবস্থানে অনড়। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো গোপনে কে কার সঙ্গে বৈঠক করছে, কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে তা নিয়েও নানা গুঞ্জন ও গুজব চলমান।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মধ্যে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার বলেছেন, ‘একটি মহল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া মানে দেশের সর্বনাশ করা।’
রাজনীতির এই ঘূর্ণিপাকের মধ্যে আগামী ১৩ নভেম্বর কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়েও নানা আলোচনা-গুঞ্জন চলমান। ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাতে পারেন।
এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের পক্ষ থেকে নানা অপকর্ম চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাতে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক যে সংকট তা এই সরকারই সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমান বিরোধ মূলত এক ধরনের প্রতিযোগিতা, দর-কষাকষি।
শেষ পর্যন্ত মতপার্থক্য থাকবে না। কারণ দলগুলোর প্রতিটিই সমান ঝুঁকিতে আছে। দলগুলোর মধ্যে মতভেদের চেয়ে উভয় পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলগত পার্থক্য বেশি, ‘সময়’কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারো মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এমন হতে পারে যে, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হবে। আর সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না। আরো দু-একটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। আবার এ কথাও বলা হচ্ছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তো আছেই। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বোঝার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
শিগগিরই সরকার সামষ্টিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত জানাবে : রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার নিজ থেকেই একটি ‘সিদ্ধান্ত নেবে’ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, সরকার দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। এই বিষয়ে শিগগিরই সরকার সামষ্টিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত জানাবে। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা আরো বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন মনে করেন, নীতিগত মতভেদের চেয়ে উভয় পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলগত পার্থক্য বেশি, ‘সময়’কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল। ১০ নভেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হলেও দলগুলোর মধ্যে কোনো কার্যকর সমন্বয় বা ঐক্যের লক্ষণ দেখা যায়নি। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে অনড়। এ ছাড়া দলটি ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ জুলাই সনদের পক্ষে, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ আরো কয়েকটি দল, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদে সাধারণ নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠানের দাবিতে সোচ্চার। এনসিপিও নোট অব ডিসেন্ট না রাখার পক্ষে।
বিএনপির সঙ্গে একসময়ে জামায়াতে ইসলামীর সখ্য ছিল, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে, সরকার গঠন করেছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর আগের বন্দোবস্ত ভেঙে গেছে বলে আপাতত মনে হয়। বিএনপি মনে করছে, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের দাবিতে অনড় থাকলে প্রথমত অন্তর্বর্তী সরকার যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে চাপের মুখে থাকবে। দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় সময় দিলে গণসমর্থনের হার ঊর্ধ্বমুখী হবে। অর্থাৎ বিএনপি যদি সরকারকে চাপের মধ্যে রাখতে পারে, তাদের জনভিত্তি বাড়বে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল মনে করছে, সাধারণ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করা হলে বিএনপির অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হবে। তারা মনে করে, সাধারণ নির্বাচনের সময়সীমা যত বিলম্বিত হবে, পরিস্থিতির ওপর ততই সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বাড়বে। উভয় পক্ষ তাই সময়কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে। ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে ঘিরে এখন যে অবস্থানগত বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা মূলত নীতিগত মতভেদের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কৌশলগত পার্থক্যের প্রতিফলন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের বিশ্লেষণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দলগুলোর মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা চলছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই দলগুলোর মধ্যে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে মতনৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। আবার একমত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ২৫ দল জুলাই সনদে স্বাক্ষরও করেছে। গণভোটের বিষয়েও একমত হয়েছে। এ জন্য আমার কাছে মনে হয়, যে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি এখন দেখা যাচ্ছে, তা খুবই সাময়িক। এখন এক ধরনের দর-কষাকষি চলছে। এখন যেসব বিষয়ে দ্বিমত আছে, সেসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, গণভোট কবে হবে এবং জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্টের বিষয় থাকবে কি না। আমার ধারণা, গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই অনুষ্ঠানের জন্য সবাই একমত হবে। নোট অব ডিসেন্ট বাদ যাবে এবং আরো কিছু বিষয় হয়তো সংযোজন- বিয়োজন হবে। শেষ পর্যন্ত মতপার্থক্য থাকবে না। কারণ দলগুলোর প্রতিটিই সমান ঝুঁকিতে আছে। রাষ্ট্রের ও রাজনৈতিক দলগুলোর গন্তব্য এখনো ঠিক হয়নি। দলগুলো এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিশ্চয় বোঝে। দলগুলো গত ১৫-১৬ বছর যে ঝুঁকির মধ্যে ছিল, ভোগান্তির মধ্যে ছিল, সেই ঝুঁকি, ভোগান্তি আবার ফিরে আসুক, সেটা তো তারা চাইবে না। এখন যে দর-কষাকষি চলছে তা ততক্ষণ চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত দলগুলোর মূল টার্গেট ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মূল টার্গেট হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে, দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চালু হবে।
গুঞ্জন রয়েছে জাতীয় পার্টির হয়ে আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। আবার শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচারের রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক চাপে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে দলটির নেতাকর্মীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিবন্ধকতা নাও থাকতে পারে। এ বিষয়ে কাজী মোহাম্মদ মাহবুুবুর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দলগুলোর বিরুদ্ধে যে অবস্থান তাতে মনে হয় না এমনটা সম্ভব হবে। সরকার ও অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে ইউটার্ন নিলে আস্থা হারাবে। এত ঝুঁকি কেউ নিতে চাইবে না।
রাজনীতিকরা যা বলছেন : চলমান রাজনৈতিক সংকটকে জাতীয় সংসদের আসন ভাগাভাগির দেনদরবার বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, নানান দিকে নানা খেলা হচ্ছে। সংকট সৃষ্টি ও সমাধানের চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু আসল এজেন্ডা হলো ছিট (সংসদের আসন) নিয়ে দেনদরবার। মার্কেট ভ্যালু (বাজারদর) বাড়াতে হলে কিছু না কিছু তো দেখাতে হবে।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সবাইকে জোর করে একমত হওয়াতেই হবে কেন? তাহলে আপনি কি বাকশাল করতে চান? রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে। তার পরও ঐক্য হবে, বৈচিত্র্যের ঐক্য।
তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে অদৃশ্য এজেন্ডা রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী তো ভালো করেই জানে, তাদের কতটুকু সাপোর্ট আছে। তার পরও তারা কেন আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে। নিশ্চয়ই এর ভেতরে কোনো বিষয় আছে। তারা কেন গণভোট নিতে চাচ্ছে। গণভোট হলে পরে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হবে। তখন তারা দাবি করবে, গণভোটে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে নির্বাচন, যা নতুন অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করবে এবং দেশকে পিছিয়ে দেবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চরম দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দুটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের (১৯৯০ ও ২০২৪) পরও অনেকে স্বৈরতন্ত্রের ভূত কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন। রাজনীতিতে নতুন জবরদস্তির আলামত দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণ-অভ্যুত্থান হলেও দেশ উল্টোপথে চলছে। ধর্ম ও অভ্যুত্থানের আবরণে, জনগণের অভিপ্রায়ের কথা বলে নানাভাবে ফ্যাসিবাদী চিন্তা, দর্শন, মানসিকতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বারবার বলছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন। কিন্তু তার পরও মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টা চলছে। পুরো পরিস্থিতি সংকটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান হচ্ছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আলোচনার মাধ্যমে পথ বের করে আনতে হবে, নইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, বিতর্ক বাড়বে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শহীদ নূর হোসেন স্মরণে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি আরো বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা এই সরকারই সৃষ্টি করেছে। তাই সমাধানের পথও সরকারকে বের করতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, কিন্তু তাই বলে তাদের সব কর্মকাণ্ডকেই সমর্থন করি না। সত্য সবাইকে মেনে নিতে হবে। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আহবান জানাই, আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করুন।
মান্না বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচন অতীতের নির্বাচনের মতো হবে না। তার পরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কিভাবে করা যায়, সেটি সরকারকে চিন্তা করতে হবে। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও জনগণকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান তিনি।
আমার বাংলাদেশ পার্টি বা এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু মনে করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে যে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তিনি বলেন, দলগুলো এখনো জেদাজেদির মধ্যে আছে। সরকারের ওপর চাপ দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি চাপ দিচ্ছে সরকার যেন জামায়াতের দাবির দিকে ঝুঁকে না পড়ে। অন্যদিকে জামায়াত চাপ দিচ্ছে, সরকার যেন বিএনপির চাপে স্যারেন্ডার না করে। সে জন্য সরকারকে আমাদের পরামর্শ, উভয় পক্ষের দাবি বিবেচনায় নিয়ে মাঝামাঝি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলগুলো যদি নিজ নিজ দাবিতে অনড় থাকে, বাড়াবাড়ি করে তাহলে সরকারকে তাদের বলতে হবে, আমরা দায়িত্ব ছেড়ে দেব। বলতে হবে, আপনারা যেহেতু আমাদের কথা মানছেন না, সে ক্ষেত্রে আপনারা অন্য কাউকে দেখেন। আমার ধারণা, সরকার যখন একটি কঠোরতা দেখাবে, তখন দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াবে। আমরা আশাবাদী, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এমন হতে পারে যে, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হবে। আর সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না। আরো দু-একটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বসতে পারেন। কিন্তু তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ দুই পক্ষের দাবি ও অবস্থান তো সবারই জানা। আরেক প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তো আছেই। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বোঝার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক কালকের দিনটাতে (আজ মঙ্গলবার ঢাকায় জামায়াতসহ আট দলের সমাবেশে) কী হয়।
সৌজন্যে – কালের কণ্ঠ।

