দুই হাজার রুপির নোট প্রত্যাহারে ভারতের অর্থনীতিতে কি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে?

0

সম্প্রতি বাজার থেকে ২ হাজার রুপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক। বলা হচ্ছে, ক্লিন নোট নীতির অংশ হিসেবে এ মূল্যের ব্যাংক নোট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অবৈধ পন্থায় অর্জিত অঘোষিত আয় বা কালো টাকার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের যেসব প্রাথমিক কারণ রয়েছে, বিমুদ্রাকরণ সেগুলোর মধ্যে একটি।

এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে নরেন্দ্র মোদি সরকার রাতারাতি ১ হাজার ও ৫০০ রুপির নোট বাতিল ঘোষণা করে। এতে ভারতজুড়ে রীতিমতো হুলুস্থুল পড়ে যায়। কেননা সরকার রাতারাতি ৮৬ শতাংশ মুদ্রা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপর ২ হাজার রুপির নোট চালু করা হয়। তাই এবার ২ হাজার রুপির নোট বাতিলের পর আবারও শুরু হয়েছে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত সরকার কেন ২ হাজার রুপির নোট তুলে নিল? ২০১৬ সালে যখন ২ হাজার রুপির নোট চালু করা হয়, তখন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিমুদ্রাকরণ পরবর্তী দ্রুত ভারতীয় মুদ্রার প্রচলন। যদিও ২০১৮-১৯ নাগাদ ২ হাজার রুপির নোট ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতজুড়ে ২ হাজার রুপির নোটের সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হচ্ছিল, তারা বাজার থেকে উচ্চমূল্যের নোট কমাতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় চার বছরে ২ হাজার টাকার নোট ছাপানো বন্ধ করা হয়েছে।

যদিও ভারত সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপের কারণ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্য ও সাধারণ নির্বাচনের আগে সাধারণত নগদ অর্থের ব্যবহার বেড়ে যায়। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি ফাইন্যান্স হোল্ডিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ রূপা রেগে নিসুর বলেন, “সাধারণ নির্বাচনের আগে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ চৌকস সিদ্ধান্ত। তবে যারা অর্থ সঞ্জয়ের জন্য এ নোটগুলো ব্যবহার করছেন তারা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন।”

২০১৭ সাল থেকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। তখন অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, মূলত নোট বাতিলের কারণে গতি হারিয়েছে অর্থনীতি। তাহলে ২ হাজার রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? 

এ সম্পর্কে রূপা রেগে নিসুর বলেন, “এ প্রত্যাহার কোনও বড় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না, কারণ ছোট পরিমাণের নোট পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ছয়-সাত বছরে ডিজিটাল লেনদেন ও ই-কমার্সের পরিধি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে।”

ভারতের বাজারে থাকা ২ হাজার রুপির নোটের মূল্য ৩ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপি বা ৪ হাজার ৪২৭ কোটি ডলার, যা প্রচলিত মুদ্রার প্রায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে ছোট ব্যবসা ও নগদভিত্তিক খাত যেমন কৃষি ও অবকাঠামো নিকট ভবিষ্যতে খানিকটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করেন স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টেকো রিসার্চের অর্থনীতিবিদ যুবিকা সিংগাল। ধারণা করা হচ্ছে, এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থার তারল্য উন্নত হবে। যেহেতু ২ হাজার রুপির সব নোট ব্যাংকিং সিস্টেমে ফিরে আসবে, আমরা প্রচলনে নগদ হ্রাস দেখতে পাব। তাই এটি ব্যাংকিং সিস্টেমের তারল্য উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে জানান এমকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরা। মঙ্গলবার থেকে ১৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে ২ হাজার রুপির নোট বদলে বাজারে চলমান নিম্ন মূল্যের নোট সংগ্রহ করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। সূত্র: রয়টার্স

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here