এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে, মমতার নিশানায় বিজেপি

0
এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে, মমতার নিশানায় বিজেপি

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) লাগু হলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে, সে ক্ষেত্রে বিদেশি হিসাবে গণ্য করা হবে, ফলে দেশ ছাড়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এরকম এক আশঙ্কা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক নাগরিক। প্রদীপ কর নামে ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৪ মহাজাতি নগর এলাকায়। মঙ্গলবার সকালের দিকে তার ঘর থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পরই বিষয়টি জানাজানি হয়। বিষয়টি সামনে আসার পরই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

জানা গেছে, প্রদীপ কর তার ছোট ভাই এবং তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতেন। সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে তিনি তার ঘরে ঘুমাতে যান। মঙ্গলবার সকালে তার কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে ভাইয়ের স্ত্রী প্রতিবেশীদের ডাকেন। এরপর ঘর খুলতেই দেখেন তার ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। পরে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে খরদা থানার পুলিশ। 

এও জানা গেছে, এনআরসি নিয়ার যথেষ্ট আতঙ্কিত ছিলেন ওই ব্যক্তি। এমনকি সোমবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের এসআইআর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আরো বিচলিত হয়ে পড়েন প্রদীপ কর। যদিও এমন কোনো বিপর্যয় নেমে আসতে পরে বলে পরিবারের কোন ধারণা ছিল না। তারা ভেবেছিলেন তিনি হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সকাল হতে মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয় পরিবারের লোকজন। এমনকি তার ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি ডায়েরি। যেখানে লেখা ছিল, আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী। 

বিষয়টি নিশ্চিত হতেই এদিন বিকালে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনাটি উল্লেখ করে শোকজ্ঞাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি লেখেন, ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি একটি চিরকুট রেখে গেছেন। যেখানে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’ 

আত্মহত্যার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে মমতা লেখেন, বিজেপির ভয় ও বিভাজনের রাজনীতির এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কী হতে পারে? বছরের পর বছর ধরে বিজেপি কীভাবে এনআরসির হুমকি দিয়ে নিরীহ নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, মিথ্যা ছড়িয়েছে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং ভোটের জন্য নিরাপত্তাহীনতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, তা ভাবতেই আমার ভয় লাগে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু বিজেপির বিষাক্ত প্রচারণার প্রত্যক্ষ পরিণতি। যারা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদ প্রচার করে তারা সাধারণ ভারতীয়দের এমন হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে যে তারা তাদের নিজের দেশেই মারা যাচ্ছে, এই ভয়ে যে তাদের ‘বিদেশী’ ঘোষণা করা হবে। 

মমতা আরো লেখেন, আমি দাবি করছি কেন্দ্রীয় সরকার এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করুক। বাংলা কখনই এনআরসিকে অনুমতি দেবে না এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না। আমাদের মাটি মা, মাটি, মানুষের, ঘৃণার উপর ভর করে এমনদের নয়। দিল্লির জমিদারদের এই কথাটি স্পষ্টভাবে শুনতে দিন: বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে এবং বাংলা জয়ী হবে। 

এদিন বিকালে তার বাড়িতে ছুটে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্থানীয় পানিহাটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নির্মল ঘোষ। তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেন। মন্ত্রীর দাবি মৃত ব্যক্তি অবিবাহিত এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। 

বিকেলে তার বাড়িতে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরিবারের সদস্যদের সদে কথা বলে প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি তা হল এনআরসি নিয়ে সর্বত্র যে কথাবার্তা চলছে তা নিয়ে প্রদীপ কর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও চিন্তিত ছিলেন। তাছাড়া সোমবার পশ্চিমবঙ্গের সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার পর উনি অস্থির হয়ে পড়েন। আজ সকালে তার ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যেই সেটিকে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তা অনুযায়ী প্রদীপ কর ভারতীয় জন্মগ্রহণ করেছেন তার বাবা হয়তো বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করে থাকতে পারেন। গোটা ঘটনার সত্যতা নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’ 

পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, প্রদীপ করের ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে যেখানে এনআরসি-কেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here