প্রতিদিন মাত্র ৪ হাজার পদক্ষেপ হাঁটা সেটাও যদি সপ্তাহে একদিন হয়, তবু তা প্রবীণদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি এক-চতুর্থাংশ বা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের এটা জানা, নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের পক্ষে আগের মতো হাঁটার পরিমাণ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এই গবেষণা জানিয়েছে, প্রবীণদের প্রতিদিন নয়, বরং সপ্তাহে এক-দুদিন নিয়মিত হাঁটলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব।
‘ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিন’-এ প্রকাশিত গবেষণাটিতে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬২ বছরের বেশি বয়সী ১৩ হাজার ৫৪৭ জন নারী। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৭২ বছর। তারা ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটানা সাত দিন অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার (শরীরচর্চা পর্যবেক্ষণ যন্ত্র) পরে হাঁটাচলা রেকর্ড করেন এবং তাদের ওপর দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী সপ্তাহে এক বা দুই দিন প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ হাজার পদক্ষেপ হাঁটতেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ২৬ শতাংশ কমে যায়। হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে ২৭ শতাংশ। যারা সপ্তাহে তিন দিন বা তার বেশি সময় এই পরিমাণ হাঁটতেন, তাদের সব ধরনের মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। যদিও হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি অপরিবর্তিত থেকেছে ২৭ শতাংশে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘কতটা হাঁটছেন’, সেটা নয় ‘কতদিন হাঁটছেন’। অর্থাৎ সপ্তাহে যতদিনই হাঁটা হোক, মোট পদক্ষেপের সংখ্যা যত বেশি হবে, স্বাস্থ্যের জন্য তত ভালো ফল মিলবে।
তারা বলেন, হাঁটার কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা নিয়মের প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে বা একসঙ্গে বেশি হাঁটা, উভয়ই উপকারী। মূল বিষয় হলো নিয়মিতভাবে পদক্ষেপ বাড়ানো।
গড়ে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন ৫ হাজার ৬১৫ পদক্ষেপ হাঁটতেন। যদিও গবেষণাটি কেবল নারীদের মধ্যে এবং এক সপ্তাহের শারীরিক কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তবুও গবেষকরা মনে করেন এই ফলাফল ভবিষ্যতের শারীরিক অনুশীলন নির্দেশিকায় পদক্ষেপভিত্তিক মানদণ্ড অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
তাদের ভাষায়, প্রবীণদের জন্য হাঁটার কোনো নির্দিষ্ট ধরন নয়, বরং মোট পদক্ষেপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে এক-দুদিনের হাঁটাও জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

