বিলুপ্ত মিঠাপানির কুমিরের দেখা মিললো রাজশাহীর পদ্মায়

0
বিলুপ্ত মিঠাপানির কুমিরের দেখা মিললো রাজশাহীর পদ্মায়

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা মিঠাপানির এক কুমিরের দেখা মিলেছে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চর মাঝারদিয়া এলাকায় এ দৃশ্য দেখেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও উদ্ধারকর্মী দম্পতি ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা। 

ইমরুল কায়েস জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তারা চরে গিয়ে পাখির ছবি তুলছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে ফোন আসে—পদ্মায় কুমির দেখা গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে কুমিরের খোঁজে বের হই। সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়ে রাখাল বালককে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, একটি খাঁড়িতে কুমির দেখেছিল। সেখানে খুঁজেও কুমিরের দেখা না পেয়ে আমরা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’

ফিরে আসার আগে ইমরুল ড্রোন উড়ান। তিনি বলেন, ‘কাশবনের ফাঁকে কোথাও কুমির আছে কিনা দেখছিলাম। হঠাৎ নদীর পানিতে ত্রিভুজাকৃতির কিছু দেখতে পাই। কাছে যেতেই বোঝা যায়, সেটি কুমির। ড্রোনে ভিডিও নিতে নিতে আমরা কুমিরের দিকে এগোই। আমার স্ত্রী ক্যামেরায় ছবি তোলে, আমিও ড্রোনে আরও কিছু ছবি নিই।’

তিনি আরও জানান, কুমিরটি দেখা গেছে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ৪৫০ মিটার ভেতরে। পদ্মার ওই অংশটি ত্রিভুজাকৃতিতে ভারতের দিকে ঢুকে গেছে এবং পানির গভীরতাও বেশি। ইমরুলের ধারণা, সেখানেই কুমিরের আশ্রয়স্থল এবং সেখান থেকে একটি কুমির বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করেছে।

ইমরুল বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর কোন সীমান্তরেখা নেই। যেমন পদ্মার চরে বন্য শূকর দেখা যায় না, কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের বনের অংশে পাওয়া যায়।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, ২০০০ সালে আইইউসিএন মিঠা পানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

তিনি বলেন, ‘তবে গত কয়েকবছরের রাজশাহীর চারঘাট, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মিঠা পানির কুমির দেখা গেছে।তবে সেগুলো ছিলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক। বৃহস্পতিবার যেটা দেখা গেছে সেটা প্রাপ্ত বয়স্ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা ভারত থেকে আসাও হতে পারে, আবার এই অঞ্চলে কুমির আবার ফিরে আসছে এটাও হতে পারে।’

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) বলেন, ‘২০১৫ সালে মিঠাপানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পাবনায় একটি, অন্যত্র আরও দুটি দেখা যায়—যেগুলো বর্তমানে সুন্দরবনের করমজল সেন্টারে রাখা আছে।’

রাজশাহীর কুমিরটি বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা নয়, বরং এটি ভারতের চাম্বুল নদ থেকে আসতে পারে বলেও তিনি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here