ল্যুভর জাদুঘরে চুরি: কি কি ঘটলো আসলে?

0
ল্যুভর জাদুঘরে চুরি: কি কি ঘটলো আসলে?

ফ্রান্সের ঐতিহাসিক ল্যুভর জাদুঘরে বিস্ময়কর চুরির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে জাদুঘরের গ্যালারি অব অ্যাপোলোতে ঘটনাটি ঘটে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ‘অভিযান’ শেষ করে পালিয়ে যায় তিন থেকে চারজন সন্দেহভাজন।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ নুনিয়েজ জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি অত্যন্ত দ্রুত ঘটেছে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডাকাতরা গায়েব হয়ে যায়। পুলিশের ধারণা, তারা আগেই পালানোর রুট পরিকল্পনা করে রেখেছিল। বর্তমানে তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছেন।

চাক্ষুষ সাক্ষীরা জানান, ঘটনাস্থলে মুহূর্তেই সম্পূর্ণ আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দর্শনার্থীদের দ্রুত জাদুঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রবেশপথগুলো ধাতব গেট দিয়ে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি ঠিক কোন কোন নিদর্শন চুরি গেছে। তবে জানা গেছে, টার্গেট করা অংশটিতে ছিল ফ্রান্সের রাজপরিবারের প্রাচীন রত্ন ও গহনা।

প্যারিসের মেয়র রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, একটি গহনা জাদুঘরের বাইরে পাওয়া গেছে। সম্ভবত পালানোর সময় ফেলে গেছে ডাকাতরা। স্থানীয় একটি দৈনিক জানিয়েছে, ওই বস্তুটি হয়তো সম্রাজ্ঞী ইউজেনির রাজমুকুট। নেপোলিয়ন তৃতীয়-এর পত্নীর পরিধেয়।

তবে আশার খবর, গ্যালারির সবচেয়ে বিখ্যাত বস্তু ১৪০ ক্যারাটের রিজেন্ট ডায়মন্ড অক্ষত রয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চুরি যাওয়া গহনার মধ্যে নেপোলিয়ন তৃতীয়ের রাজরত্নও থাকতে পারে। অন্য একটি প্রদর্শনী কাচের ক্যাবিনেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মন্ত্রী নুনিয়েজ এই নিদর্শনগুলোকে বর্ণনা করেছেন অমূল্য ও অপরিমেয় ঐতিহ্যমূল্যসম্পন্ন হিসেবে।

ল্যুভরের ইতিহাসে চুরির ঘটনা নতুন নয়। ১৯১১ সালে এক ইতালীয় কর্মচারী বিখ্যাত মোনা লিসা চিত্রকর্মটি চুরি করে পালিয়ে যান। তখনো এই চিত্রকর্ম খুব বেশি পরিচিত ছিল না। দুই বছর পর সেটি উদ্ধার হয়।

১৯৯৮ সালে ক্যামিল কোরোর আঁকা ‘লে শ্যাঁ দ্য সেভ্র’ চিত্রটি হারিয়ে যায় এবং আজও তার খোঁজ মেলেনি। এরপর থেকেই ল্যুভরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।

সম্প্রতি ফ্রান্সে জাদুঘর চুরির ঘটনা বেড়েছে। গত মাসে লিমোজ শহরের অ্যাড্রিয়েন ডুবুশে মিউজিয়াম থেকে ৯.৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোর্সেলিন চুরি হয়। এছাড়া, গত নভেম্বরে প্যারিসের কগন্যাক-জে মিউজিয়াম থেকে সাতটি ঐতিহাসিক নিদর্শন চুরি হয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচটি সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে। একই মাসে বুরগুন্দির হিয়রোঁ মিউজিয়ামেও সশস্ত্র ডাকাতি হয়। সেখানে কয়েক কোটি টাকার ২০শ শতাব্দীর শিল্পকর্ম লোপাট হয়।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাজকীয় গৌরবে ভরপুর ল্যুভের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। অমূল্য রাজরত্ন হারিয়ে যাওয়ায় শুধু ফ্রান্স নয় সমগ্র শিল্পজগৎই স্তম্ভিত। ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here