তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটের প্রয়োজন হয়। রবিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গণনা হওয়া ৯৯.৩২ শতাংশ ভোটের ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯.৪২ শতাংশ অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪.৯৫ শতাংশ ভোট।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়াতে পারে। এরদোয়ান কেন প্রথম রাউন্ডে জয় পেলেন না বিশ্লেষকরা তার ব্যাখা দিয়েছেন।
ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনগুলোয় এরদোয়ানের প্রধান জাদু ছিল সাধারণ মানুষের রুজি–রোজগারের উন্নয়ন। এ জন্য তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়িয়েছিলেন। সহজ শর্তে ক্রেতাঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এরদোয়ানের পক্ষে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়, তাতে পুরোনো জনতুষ্টিমূলক কর্মসূচিগুলো চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এতে সমাজে তার নেতিবাচক ছাপ পড়েছে।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সামরিক অভ্যুত্থান সামাল দেওয়ার পর থেকে এরদোয়ান অনেক সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীকে কারাগারে ঢুকিয়েছেন, লক্ষাধিক মানুষকে চাকরিচ্যুত করেছেন। সামরিক অভ্যুত্থান সামাল দেওয়া এরদোয়ানের বড় এক রাজনৈতিক সফলতা ছিল। কিন্তু কুখ্যাত ‘১৫ জুলাইকে’ তিনি বিরোধী মত দলনে যেভাবে বছরের পর বছর অজুহাত হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন, তাতে অনেকে বিরক্ত। রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীমাত্র ‘অভ্যুত্থানপন্থী’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করার রেওয়াজ থামা দরকার বলে মনে করেছে ভোটারদের একাংশ।
২০ বছর এবং সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণাতেও এরদোয়ান কুর্দিবিরোধী জাতীয়তাবাদী উত্তাপ ছড়িয়েছেন ব্যাপক। এ রকম লাগাতার জাতীয়তাবাদী চাপ সংখ্যালঘুদের বড় অংশকে বাধ্য করেছে এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমালকে ভোট দিতে। কমবেশি ৬০ লাখ কুর্দিভোটের উল্লেখযোগ্য এক ভাগ নির্বাচনে কেমালের পক্ষে গেছে।
নির্বাচনে এরদোয়ানকে ভুগিয়েছেন আসলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমেল নন—মাঠ থেকে একে একে সরে যাওয়া অপর তিন প্রার্থী। সর্বশেষ হোমল্যান্ড পার্টির মুহরারম ইনজে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় এরদোয়ান মুশকিলে পড়েন। ইনজে দাঁড়িয়ে থাকলে যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতেন, তার অনেকখানি কেমেলের দিকেই গেছে বলে মনে করা হয়। কেমেলের সঙ্গে এরদোয়ানের ‘প্রায় সমান-সমান’ লড়াইয়ের নির্বাচনী চেহারা তৈরি করেছেন ড্রপ আউট তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
এরদোয়ান চেয়েছিলেন তার বিপরীতে বিরোধী শিবিরের তিন থেকে চারজন প্রার্থী মাঠে থাকুক। শুরুতে সে রকমই ছিল আসর। কিন্তু অনেকেই একে একে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শুরু করেন। এরদোয়ান এ রকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কেমাল এ অবস্থা থেকে কিছু সুবিধা পেয়েছেন।
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা সবাই স্বীকার করেন, ব্যক্তি হিসেবে ‘হাসিমাখা বুড়ো’ কেমেল ‘গম্ভীর ও সিরিয়াস’ চেহারার এরদোয়ানের চেয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কম আকর্ষণীয়। কিন্তু কেমালের বড় গুণ—বিপরীত আদর্শের দলগুলোকে এক টেবিলে বসাতে পারা। ছয়দলীয় যে জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে লড়েছেন, তাতে উগ্র জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে কুর্দিদের দলও আছে।