ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টি জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
সোমবার (৮ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, মোখা’র কেন্দ্রের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত শুরু করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে (রবিবার) দুপুরের পর থেকে মধ্য রাতের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা। ঘূর্ণিঝড় মোখার পেছনের অর্ধেক অংশ উপকূলে অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৫ মে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত।
তিনি জানান, আমেরিকার নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গতকাল রাত ১২টার সময় ইনভেস্ট ৯১বি (INVEST 91B) এর অবস্থান ছিলও ৬ দশমিক ১ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। আজ সকাল ৭টার সময় জাপানের হিমাওয়ারি ৯ নামক কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, ইনভেস্ট ৯১বি (INVEST 91B) এর কেন্দ্রের অবস্থান ৬ দশমিক ৫ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ইনভেস্ট বর্তমানে যে স্থানে অবস্থান করছে সেই স্থানে উলম্ব বায়ু শিয়ায়ের মান ১০ থেকে ১৫ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ু শিয়ায়ের এই মান সমুদ্রপৃষ্ঠের এই তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে আদর্শ অবস্থা। ইনভেস্ট ৯১ বি আগামী ২৪ থেকে ২৮ ঘণ্টা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইনভেস্টের কেন্দ্রে বায়ুচাপ ১০০৫ মিলিবার পরিমাপ করা হয়েছে। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে ইনভেস্টের কেন্দ্রে বায়ুর গতিবেগ প্রায় ২৫ কিলোমিটার পরিমাপ করা হয়েছে। ইনভেস্ট ৯১ বি আগামীকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যা ১০ মে সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মে মাসের ১১ তারিখে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১১ তারিখ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ১০ ও ১১ তারিখে। এরপরে ১২ মে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কার কথা নির্দেশ করছে।
জেলেদের জন্য সতর্ক বার্তা দিয়ে তিনি জানান, আজ দিনের শেষ ভাগে কিংবা আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। নিম্নচাপটি ১০ মে দিনের কোনো এক সময় পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। উপকূলীয় এলাকার কোনো জেলে ছোট নৌকা নিয়ে ৯ মে এর পরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে প্রাণ নিয়ে উপকূলে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর এরইমধ্যে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপের চারপাশে জেলেদের মাছ ধরা ও চলাচল না করার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা’র ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখার জন্য নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে
১) ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আগামীকাল থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শুরু করা।
২) কৃষকদের সব পাকা ধান মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে কেটে গোলায় তোলা।
৩) উপকূলীয় এলাকার মৎস্যচাষিদের জলোচ্ছ্বাস থেকে মাছের ঘের রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
৪) লবণ চাষিদের মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সব লবণ তুলে ফেলা।
৫) জেলেদের অনুরোধ জানান ১০ তারিখের পরে নতুন করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে না যাওয়ার জন্য। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের জেলেরা যেন অবশ্যই ১১ মে এর মধ্যে ও খুলনা বিভাগের জেলেরা অবশ্যই ১২ ই মে এর মধ্যে উপকূলে ফিরে। ১১ মের পরে যদি কোনো জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় তবে প্রাণ নিয়ে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
৬) বন্যা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি লেখেন, উপকূলীয় সব বেড়িবাঁধের সব ত্রুটি কিংবা দুর্বলস্থানগুলো মে মাসের ১২ তারিখের আগেই মেরামত করা প্রয়োজন।