রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় গত ৫০ বছরে বনভূমি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। অর্ধশতক বছর আগে জনসংখ্যার তুলনায় ২০ শতাংশ বনভূমি ছিল প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট। কিন্তু মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা মিটাতে গিয়ে বনভূমি ধ্বংস করেছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কিছু বনভূমি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে।
জানা গেছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনভূমির এবং গাছপালার প্রয়োজন মোট ভূমির ২৫ শতাংশ। কিন্তু রংপুরে সরকারি বনভূমি রয়েছে এক শতাংশের কম। অপরদিকে বেসকারি পর্যায়ে গাছপালা রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। নগরায়ন এবং অবৈধ দখলদারদের অবাধে বৃক্ষ নিধনের কারণে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে রংপুরের বনভূমি। ফলে এই অঞ্চলের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে প্রকৃতি বিচিত্র আচরণ করছে। মানুষসহ প্রাণী জগতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রংপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ৫০ বছর আগে বর্তমান বনভূমির ২০ শতাংশের বেশি বনভূমি ছিল। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে নষ্ট করে ফেলেছে গাছপালা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের খাদ্যের চাহিদা মিটাতে অনেকস্থানে বন কেটে আবাদী জমি করা হয়েছে। মানুুষ দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাতে প্রতিদিন গাছ কাটছে। এছাড়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ধরলা, ঘাঘট নদেও অনেক বনভ’মি কিংবা গাছপালা নদী গর্ভে চলে গেছে। এভাবে রংপুর থেকে বনভূমি হারিয়ে গেছে। বনভূমি হারিয়ে যাওয়ায় নীলগাইসহ বেশ কয়েকটি প্রাণী হারিয়ে গেছে এই অঞ্চল থেকে।
জানা গেছে, রংপুরে গাছপালা রয়েছে ২৮১ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটার। যা ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। নীলফামারীতে রয়েছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশে ১১১ দশমিক ১২ বর্গকিলোমটার। গাইবান্ধায় ৮ দশমিক ১১ শতাংশে গাছপালা রয়েছে ১৮১ দশমিক ২৭ বর্গ কিলোমিটর। কুড়িগ্রামের ২৩৯ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার। যা ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। লালমিনরহাটের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে গাছপালা রয়েছে ১২১ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার।
অপরদিকে সরকারি সামাজিক বন বিভাগের বনভূমি রয়েছে ৭ হাজার ২৪০ একর। যা প্রকৃতির চাহিদার এক শতাংশের কম। এর মধ্যে রংপুরে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে এক হাজার ৬৯০ একর, রক্ষিত বনভূমি রয়েছে ৪৯৩ একর, অর্পিত রয়েছে এক হাজার ৭৬৬ একর, অর্জিত রয়েছে ২৭ দশমিক ৩০ একর, হস্তান্তরিত হয়েছে দশমিক ৫২ একর। নীলফামারীতে সংরক্ষিত বন ভূমি নেই। রক্ষিত রয়েছে ৬৪৮ দশমিক ১৬ একর, অর্পিত রয়েছে ৫৬১ দশমিক ৫৩ একর। অর্জিত বনভূমি শূন্য। হস্তান্তরিত বনভূমি রয়েছে এক হাজার ৫২৮ একর এবং প্রস্তাবিত রয়েছে ৩২৩ একর। লালমনিরহাটে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ৮২ দশমিক ৬২ একর। এই জেলায় অর্পিত, অর্জিত, রক্ষিত, হস্তান্তরিত এবং প্রস্তাবিত বনভূমি নেই। কুড়িগ্রাম জেলায় সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১২৮ দশমিক ৫৯ একর। এই জেলাও অর্পিত, অজিত, রক্ষিত, হস্তান্তরিত এবং প্রস্তাবিত বনভূমি নেই।
সূত্রমতে একযুগে বেসরকারি এবং সরকারি পর্যায়ে এই অঞ্চলের লাখ লাখ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। দুই বছর আগে ‘তিস্তা সেচ ক্যানেলের সংস্কারের জন্য খালের উভয় পাশে সামাজিক বনায়নের প্রায় ৪ লাখের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছের বদলে নতুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও এ পর্যন্ত কত গাছ লাগানো হয়েছে তা কেউ বলতে পারছেনা। উন্নয়নের নামে গাছ কাটায় প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে ।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, রংপুর বিভাগ ঘোষণা হবার পর থেকে আবাদি জমির আকার পরিবর্তন করে বসত বাড়ি করার প্রবণতা বেড়েছে আস্বাভাবিক হারে। ফলে গাছপালা কমে গেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বড় গাছপালা তথা বনায়ন মোটেও হয়নি। ফলে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই ক্রমে ক্রমে। তার মতে বন অর্থাৎ গাছ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। বায়ুমন্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইড জমা করে জলবায় পরিবর্তনকে প্রশমিত করে বন। জীববৈচিত্র ঠিক রাখতে বনের গুরুত্ব অপরিসিম। তাই বৃক্ষ নিধন বন্ধে কঠোর হওয়া উচিত।
রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৫০ বছর আগে এই অঞ্চলে ২০ শতাংশের বেশি বনভূমি ছিল। যা সে সময়ের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে গাছপালা কেটে ফেলায় এই অঞ্চলে আস্বাভাবিকহারে বনভূমি কমে গেছে। বর্তমানে সরকারি বনভূমি এক শতাংশের কম।

