দীর্ঘ ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে যুক্তরাজ্যে বেড়েই চলেছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। ১৯৭৭ সালের পর এবারই প্রথম খাদ্যদ্রব্যের দামে এত উল্লম্ফন দেখা গেল দেশটিতে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্রিটেনের বাজারে টমেটো, শশা ও মরিচের মতো অত্যাবশ্যকীয় সালাদ পণ্যের সরবরাহে দারুণ সংকট তৈরি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মূল সরবরাহকারী উত্তর আফ্রিকায় উৎপাদন কম হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
দেশটির ট্যাক্স অফিসের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারিতে ব্রিটেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৩ টন সবজি আমদানি করেছে। ২০১০ সালের পর এটিই একমাসে সবচেয়ে কম সবজি আমদানির রেকর্ড। অথচ সে সময়ের চেয়ে এখন জনসংখ্যা বেড়েছে অন্তত ৭ শতাংশ বেশি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কানতারের তথ্য বলছে, ১৯ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে নিত্যপণ্যের দামে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশে। যুক্তরাজ্যের অনেক খুচরা বিক্রেতাই কম পণ্য কিনছেন। কারণ তারা জানেন, তাদের ক্রেতাদের পক্ষে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব নয়।
ব্রিটিশ গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ওয়ার্ড বলেন, ব্রিটেনের তাজা খাদ্যপণ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কতদিন পর্যন্ত উৎপাদকরা লোকসানে থেকেও খাদ্য উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবেন তারও একটি সীমা রয়েছে।
সামনের দিনগুলোয় আরও ঘাটতি তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে কৃষক, উৎপাদক ও খামারিদের ইউনিয়নগুলো। সম্ভবত শিগগিরই যুক্তরাজ্যের মাটিতে জন্মে এমন সবজি নিয়েও সংকট তৈরি হবে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে লিক, ফুলকপি ও গাজর। আর এসব উৎপাদনে সংকটের জন্য দায়ী থাকবে গ্রীষ্মের কারণে সৃষ্ট খরা পরিস্থিতি ও তীব্র ঠাণ্ডা।
সাধারণত প্রতি বছর মার্চে যুক্তরাজ্য মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশ টমেটো আমদানি করে। কিন্তু গত জুনে আমদানি ৪০ শতাংশ পতনের মুখে পড়ে। যা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান ছিল। বাগান রক্ষণাবেক্ষণসংক্রান্ত জটিলতায় পর্যাপ্ত গাছ লাগাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আপেল ও পিয়ার চাষীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালাদ পণ্যের এ সংকট ব্রিটেনের তাজা সবজির উৎপাদন শিল্পে যে সংকট রয়েছে, সেটিই প্রকাশ্যে এনেছে।
অবশ্য এ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও দেশটির সরকার বলছে, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিয়ে সংকট শিগগিরই কেটে যাবে। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন চিত্রই দেখাচ্ছে। লিয়া ভ্যালি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের মোট চাহিদার তিন-চতুর্থাংশ শশা ও মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম উৎপাদন করেন।
সংগঠনটির সেক্রেটারি লি স্টিলেস বলেন, “তাদের সদস্যদের অর্ধেকের বেশি জমি এখনো অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। গত বছরই উৎপাদন বন্ধ করেছেন অন্তত ১০ শতাংশ চাষী।” সূত্র: রয়টার্স, ইউরোপিয়ান সুপার মার্কেট ম্যাগাজিন, ইউএস নিউজ