৩০০ টেরাবাইট ডাটা চুরি: একদিনে বদলে গেল ডিজিটাল মিউজিকের ভবিষ্যৎ

0
৩০০ টেরাবাইট ডাটা চুরি: একদিনে বদলে গেল ডিজিটাল মিউজিকের ভবিষ্যৎ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাইকে ঘিরে ভয়াবহ এক অভিযোগ সামনে এসেছে। একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ দাবি করেছে, তারা স্পটিফাই থেকে প্রায় ৮ কোটি ৬০ লাখ গান এবং বিপুল পরিমাণ মেটাডাটা স্ক্র্যাপ করেছে। এই ডাটার মোট আকার প্রায় ৩০০ টেরাবাইট বলে দাবি করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

‘আন্নাজ আর্কাইভ’ নামের ওই গ্রুপ জানায়, তারা স্পটিফাই থেকে ৮৬ মিলিয়ন অডিও ফাইল এবং ২৫৬ মিলিয়ন সারির মেটাডাটা সংগ্রহ করেছে। এসব মেটাডাটার মধ্যে রয়েছে শিল্পী, অ্যালবাম ও গানের তথ্য। স্পটিফাই জানিয়েছে, এটি তাদের পুরো মিউজিক লাইব্রেরি নয়, তবে ঘটনাটিকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

স্টকহোমভিত্তিক স্পটিফাই, যার বিশ্বজুড়ে ৭০০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে, জানায় তারা ইতিমধ্যে অবৈধভাবে স্ক্র্যাপিংয়ে জড়িত অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে বন্ধ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য অনুযায়ী, একটি তৃতীয় পক্ষ প্রকাশ্য মেটাডাটায় প্রবেশ করে এবং অবৈধ কৌশলে ডিআরএম ব্যবস্থা পাশ কাটিয়ে কিছু অডিও ফাইলের অ্যাক্সেস নেয়।

স্পটিফাই জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ওই অডিও ফাইলগুলো প্রকাশ করা হয়নি বলে তারা বিশ্বাস করে। তবে আন্নাজ আর্কাইভ তাদের ব্লগে জানিয়েছে, তারা একটি মিউজিক সংরক্ষণাগার তৈরি করতে চায় এবং এই ডাটাগুলো টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করার পরিকল্পনা রয়েছে। গ্রুপটির দাবি, তাদের সংগ্রহ করা গানগুলো স্পটিফাই ব্যবহারকারীদের শোনা গানের প্রায় ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।

আন্নাজ আর্কাইভ নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে মানব সভ্যতার জ্ঞান ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ। তাদের ভাষায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ কিংবা বাজেট সংকটের কারণে যাতে সঙ্গীত হারিয়ে না যায়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। তবে বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে কেবল সংরক্ষণ হিসেবে দেখছেন না।

সুরকার ও কপিরাইট কর্মী এড নিউটন রেক্স বলেন, এই সংগৃহীত গানগুলো এআই মডেল তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তার মতে, এআই শিল্পে চুরি করা কনটেন্ট ব্যবহার এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই সরকারগুলোর উচিত এআই কোম্পানিগুলোকে তাদের ট্রেনিং ডাটার উৎস প্রকাশে বাধ্য করা।

এই ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে কপিরাইট আইন ও এআই প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শিল্পী ও সৃজনশীল পেশাজীবীরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সরকার জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ বলছেন, তাত্ত্বিকভাবে এই ডাটার মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে একটি বিনামূল্যের স্পটিফাইয়ের মতো সেবা তৈরি করা সম্ভব। তবে প্রধান বাধা কপিরাইট আইন ও তার প্রয়োগ।

স্পটিফাই জানিয়েছে, এই ঘটনার পর তারা নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে এবং সন্দেহজনক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য এতে জড়িত নয় বলে জানানো হয়েছে, তবু এত বড় ডাটা স্ক্র্যাপের দাবি ডিজিটাল দুনিয়ায় কনটেন্টের নিরাপত্তা ও মালিকানা নিয়ে নতুন করে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, ফোনএরিনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here