দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের চাপ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে; যা ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ হার। ফলে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও আর্থিক সুশাসন নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপির হার দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণ ও অগ্রিম দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, যা মোট ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে ৩৬ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত প্রকৃত ঋণের ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। একই সময় পর্যন্ত প্রকৃত বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ ২৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেলেও খেলাপি বেড়েছে ২৭ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ, রাইট-অফ, পুনঃ তফসিলকৃত, আদালতে চলমান ঋণসহ মোট ‘ডিস্ট্রেস্ড অ্যাসেট’ শিগগিরই ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেপ্টেম্বর শেষে স্থগিত সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৯৯৯ সালে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ। এরপর তা কমে ২০১১ সালে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১ শতাংশে। কিন্তু পরবর্তী এক দশকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে খেলাপি ঋণ বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নতুন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ফরেনসিক অডিটের পাশাপাশি ঋণখেলাপির আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করায় খেলাপির প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না।’
ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রয়োজনীয় প্রভিশন ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি। ফলে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি আরও ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বাড়িয়ে তুলেছে।

