২১ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, ৩৬০ প্রার্থী কোটিপতি

0

ভারতের সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ। আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফার ভোট। এই ধাপে ১০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৯৬টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এই দফায় মোট ১৭১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও সেলিব্রিটি প্রার্থীরাও।

চতুর্থ ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া ১৭১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭১০ জনের মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৪৭৬ জন (২৮ শতাংশ) প্রার্থী কোটিপতি। ভোট নজরদারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)’ এবং ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ এর যৌথ জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।

চতুর্থ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটিপতি প্রার্থী রয়েছে স্বতন্ত্র দলের- ১২২ জন,  বিজেপির ৬৫, কংগ্রেসের ৫৬, বিএসপির ২৭, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির ২৪, এবং ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি (বিআরএস) এবং তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)র ১৭ জন।

চতুর্থ দফায় সবচেয়ে বিত্তবান প্রার্থী হলেন তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ড. চন্দ্রশেখর পেমমাসানি। তার মোট সম্পদ ৫,৭০৫ কোটি রুপিরও বেশি। এরপরই রয়েছেন তেলেঙ্গানার চেভেল্লা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কোন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডি। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪,৫৬৮ কোটিরও বেশি। বৃত্তবান প্রার্থীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি প্রার্থী প্রভাকর রেড্ডি ভেমিরেড্ডি। তার সম্পত্তির পরিমাণ ৭১৬ কোটি রুপির বেশি। প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম সম্পত্তি রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের বাপাতলা কেন্দ্রের প্রার্থী কাট্টা আনন্দ বাবু। হলফনামায় স্বতন্ত্র দলের এই প্রার্থী নিজের সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন মাত্র ৭ রুপি।  

ADR এর যৌথ জরিপে দেখা গেছে, এ দফায় যতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মধ্যে ৩৬০ জন প্রার্থীর (২১%) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ২৭৪ (১৬%) জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ। ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে, ৩০ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে, ৫০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা রয়েছে, ৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে, ৪৪ জনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখার মামলা। বিভিন্ন মামলায় ১৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। 

যেসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের ৪০ জনের বিরুদ্ধে এই ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরপরই কংগ্রেসের রয়েছে ৩৫ জন, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির ১২ জন, বিআরএস’এর ১০ জন, টিডিপি’র ৯ জন, সমাজবাদী পার্টির ৭ জন, অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর ৩ জন, তৃণমূল কংগ্রেসের ৩ জন, বিজেডি’র ২ জন, আরজেডির ২ জন, শিবসেনা (একনাথ সিন্ধে গোষ্ঠী) ২ জন এবং শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে গোষ্ঠী)-এর ২ জন প্রার্থী। 

চতুর্থ ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া ১৭১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৪৪ জনের (৩৮%) শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ, ৯৪৪ জন (৫৫%) স্নাতক কিংবা তার অধিক ডিগ্রি রয়েছে, ৬৬ জন ডিপ্লোমা হোল্ডার, ৩০ জন প্রার্থী কেবল শিক্ষিত বলে নিজেদেরকে উল্লেখ করেছেন, ২৬ জন প্রার্থী নিজেদেরকে অশিক্ষিত বলে হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছেন। 

এ দফায় যে কজন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মধ্যে ১৭০ জন (১০ শতাংশ) প্রার্থী নারী, সর্বাধিক ৬৪২ জন প্রার্থীর গড় বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছর, ৮৪২ জন প্রার্থীর গড় বয়স ৪১ থেকে ৬০ বছর, ২২৬ জনের গড় বয়স ৬১ থেকে ৮০ বছর। 

চতুর্থ দফায় যে ৯৬টি লোকসভা আসনে ভোট হতে চলেছে তার মধ্যে ৫৮টি আসনে (৬০%) লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। এর অর্থ এই কেন্দ্রগুলোতে তিনজন কিংবা তার অধিক প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ রয়েছে। মোট সাত দফায় দেশটির ৫৪৩টি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় ১৯ এপ্রিল, দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল এবং তৃতীয় দফায় ৭ মে ভোট নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথম তিন দফার ভোটের মধ্যে দিয়েই অর্ধেকের বেশি আসন অর্থাৎ ২৮৩ আসনে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here