হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার যোগাযোগ সম্পন্ন করেন। যদিও এই অ্যাপটিকে হাতিয়ার করেই আর্থিক প্রতারণার নানা রকমের ছক কষছে দুষ্কৃতিকারীরা।
বিভিন্ন রিপোর্ট অনুয়ায়ী, প্রতারকেরা মানুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল বের করছে। সে সব কৌশলের মধ্যে রয়েছে ভুয়া ফোন থেকে শুরু করে ফিশিং লিঙ্ক। এমনকি, ভুয়া হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন অনলাইন রিপোর্টে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যবহারকারী বিভিন্ন মাধ্যমে আসা ভুয়া মেসেজে ক্লিক করেন। তার পরেই অ্যাঙ্কাউন্ট হ্যাক কিংবা আর্থিক ক্ষতির মতো ঘটনা ঘটে। তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই কিন্তু এই ধরনের বিপদ এড়িয়ে চলা যায়।
যদিও এর মধ্যেই অনলাইনে জালিয়াতির নতুন পন্থা খুঁজে বার করেছে হ্যাকাররা। তারা এমন একটি সাধারণ ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছে, যা ডাউনলোড করতেই অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
কিন্তু কী এই নতুন জালিয়াতি? বিশেষজ্ঞেরা এই নতুন জালিয়াতির নাম রেখেছেন ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইমেজ স্ক্যাম’ অর্থাৎ, হোয়াটসঅ্যাপে ছবির মাধ্যমে প্রতারণা।
কীভাবে এই নতুন জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছে জালিয়াতেরা? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপ বা অনুরূপ মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি ছবি পাঠিয়ে মানুষকে নিশানা করার কৌশল খুঁজে পেয়েছে সাইবার অপরাধীরা।
প্রথমে একটি অচেনা নম্বর থেকে গ্রাহকের ফোনে একটি ‘ইমেজ’ বা ছবি পাঠিয়ে দেয় প্রতারকেরা। অসাবধানতার বশে যদি সেই ছবি এক বার ডাউনলোড হয়ে যায় ব্যস! নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে অপরাধীরা।
আসলে যে ছবিটি পাঠানো হয়, তার ফাইলের ভিতরে ম্যালঅয়্যার লুকোনোর জন্য ‘স্টেগানোগ্রাফি’ নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে জালিয়াতেরা। গ্রাহক ছবিটি ডাউনলোড করলে বা খুললে ম্যালঅয়্যারটি নিজে থেকেই ফোনে ইনস্টল হয়ে যায়।
কী এই স্টেগানোগ্রাফি? রুশ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ক্যাসপারস্কির মতে, স্টেগানোগ্রাফি হল অন্য কোনও বার্তা বা বস্তুর মধ্যে তথ্য লুকিয়ে রাখার অভ্যাস। সেই তথ্য চট করে মানুষের নজরে পড়ে না।
স্টেগানোগ্রাফি পন্থা অবলম্বন করে অসুরক্ষিত ডিজিটাল ফাইল বা ম্যালঅয়্যার গোপনে কোনও গ্রাহকের ফোনে পাঠানো যেতে পারে।
শুধু ছবি না, স্টেগানোগ্রাফি ব্যবহার করে সাধারণ মেসেজ, ছবি, ভিডিও বা অডিওর মাধ্যমেও যে কোনও মানুষের ফোনে ম্যালঅয়্যার পাঠানো যেতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার জন্য ছবিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে হ্যাকাররা? ম্যালঅয়্যারগেলো গ্রাহকের ফোনে ইনস্টল হয়ে গেলে সেগুলো ফোনের ওটিপিও পেতে সক্ষম হয়। ফলে সহজেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে সাইবার অপরাধীরা।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে এই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। হোয়াটসঅ্যাপে আসা ছবি ডাউনলোড করার কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ টাকা খোয়া যায়।
তবে সাইবার অপরাধীদের অভিনব প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়ও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অচেনা নম্বর থেকে আসা সন্দেহজনক ছবি বা লিঙ্ক নিয়ে সাবধান হতে হবে গ্রাহকদের। কোনও মতেই ওই লিঙ্ক বা ছবিতে যেন ক্লিক না করেন তাঁরা।
অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এলে সেগুলোকেও ব্লক করা উচিত গ্রাহকদের। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকিং এবং লেনদেনের অ্যাপের জন্য ‘ফেস আইডি’ বা ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ লক ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে।