হেমাচুরিয়া বা প্রস্রাবে রক্ত: সতর্ক হওয়ার সংকেত

0

হেমাচুরিয়া কী? প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় হেমাচুরিয়া বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো সুস্থ মানুষের প্রস্রাবে রক্ত থাকার কথা নয়। তাই এটি একটি গুরুতর উপসর্গ।

হেমাচুরিয়া নিজে কোনো রোগ নয়, বরং মূত্রতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হেমাচুরিয়া মারাত্মক অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে, তাই একে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।

স্বাভাবিক প্রস্রাবের রঙ: হালকা হলুদ, পানি কম খেলে গাঢ় হলুদ বা বাদামী রঙের হতে পারে, পানি বেশি খেলে পরিষ্কার স্বচ্ছ হয়, লাল, গোলাপী বা পিচ রঙ দেখা দিলে বুঝতে হবে প্রস্রাবে রক্ত মিশ্রিত হয়েছে।

হেমাচুরিয়ার ধরন: রক্তের পরিমাণের ভিত্তিতে হেমাচুরিয়া দুই প্রকার- ১. মাইক্রোস্কোপিক হেমাচুরিয়া: খালি চোখে দেখা যায় না, শুধু পরীক্ষায় ধরা পড়ে। ২. ম্যাক্রোস্কোপিক (গ্রস) হেমাচুরিয়া: খালি চোখে প্রস্রাব লালচে দেখে রক্ত মিশ্রিত বোঝা যায়।

ব্যথার ভিত্তিতে হেমাচুরিয়ার দুই প্রকার: বেদনাসহ হেমাচুরিয়া ও বেদনাহীন হেমাচুরিয়া (বিশেষ করে বেদনাহীন গ্রস হেমাচুরিয়া মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত হতে পারে)।

প্রস্রাবে রক্তের কারণ: মূত্রতন্ত্রের (কিডনি, কিডনি নালী, মূত্রাশয়, মূত্রনালী) যেকোনো স্থানে রক্তপাত হলেই হেমাচুরিয়া হতে পারে।

শিশু ও পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে প্রধান কারণ: মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ।

মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ: নেফ্রাইটিস, লুপাস নেফ্রোপ্যাথি।

পাথর: কিডনি, ইউরেটার বা মূত্রথলির পাথর।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে: কিডনি/মূত্রনালী/মূত্রাশয় ক্যানসার, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি।

আঘাত: খেলাধুলা বা অতিরিক্ত ব্যায়ামে কিডনিতে আঘাত।

জন্মগত রোগ: সিকেল সেল অ্যানিমিয়া বা পলিসিস্টিক কিডনি রোগ।

লক্ষণ ও উপসর্গ: মূত্রাশয় ও ইউরিন সংক্রমণ বা কিডনি সংক্রমণ, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা, জ্বর, তলপেটে ব্যথা, কোমড়ের দুইপাশে ব্যথা, বারবার প্রস্রাবের বেগ।

কিডনিতে পাথর: কোমড়ের এক বা দুপাশে বা পেটে তীব্র ব্যথা।

কিডনির প্রদাহ (নেফ্রাইটিস): উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বলতা, শরীর ফুলে যাওয়া, চোখের চারপাশে ফোলাভাব।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে: ব্যথাহীন হেমাচুরিয়া মূত্রতন্ত্রের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিলে করণীয়: ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার উপসর্গ শুনে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু ল্যাব টেস্ট করাবেন।

প্রয়োজনীয় টেস্ট: প্রস্রাব পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, সিস্টোস্কোপি ও বায়োপসি (প্রয়োজনে)।

চিকিৎসা: ইউরিন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে কালচার রিপোর্ট দেখে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক, টিবি হলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত Anti-TB ওষুধ। নেফ্রলজিকাল রোগে নিয়মিত ঔষধ সেবন, পাথর থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাথর অপসারণ, প্রস্টেট বৃদ্ধিতে ওষুধ বা অস্ত্রোপচার, ক্যানসারের ক্ষেত্রে গ্রেড ও স্টেজ অনুযায়ী অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি।

আশার কথা: হেমাচুরিয়ার মাধ্যমে ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ায় সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।

কিভাবে প্রতিরোধ করবেন: ইউরিন ইনফেকশন রোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

পাথর প্রতিরোধে: সুষম খাদ্যাভ্যাস। বেশি সবজি খাওয়া। রেড মিট, পালংশাক, স্ট্রবেরি, মাখন, চকলেট জাতীয় খাবার কম খাওয়া। লবণ কম খাওয়া।

মূত্রতন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধে: ধূমপান থেকে বিরত থাকা। ট্যানারি, কীটনাশক বা রাসায়নিক শিল্পে কাজ করলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ইউরোলজি, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here