ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ইরান-সমর্থিত হিসেবে আখ্যায়িত করে তেহরানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, হুতি বিদ্রোহীদের চালানো যেকোনো আক্রমণকে ইরানের হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। তাদের প্রতিটি গুলিকে ইরানের অস্ত্রভান্ডার থেকে চালানো গুলি হিসেবে ধরা হবে। আর এর পরিণতি তেহরানকে ভোগ করতে হবে, যা হবে ভয়াবহ। গত সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে এসব কথা বলেন ট্রাম্প।
বিবিসির খবরে বলা হয়, দৃশ্যত ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে ইরানের ওপর সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা হিসেবেও দেখছেন।
ট্রুথ সোশ্যালে তিনি আরও লিখেছেন, “ইয়েমেনের দাঙ্গাবাজ ও গুন্ডাদের শত শত আক্রমণের মূলে রয়েছে ইরান। প্রকৃতপক্ষে তারা ইরানেরই তৈরি। ইয়েমেনের জনগণ তাদের ঘৃণা করে। ভবিষ্যতে তাদের যেকোনো আক্রমণ শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।”
এর আগে চলতি মাসের গোড়ার দিকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠান ট্রাম্প। এতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, তেহরান যদি পারমাণবিক চুক্তিতে না পৌঁছায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
চিঠিতে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে ট্রাম্পের চিঠিতে নতুন কিছু ছিল না বলে দাবি তেহরানের। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, “ওই চিঠির বিষয়বস্তু ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্যের চেয়ে খুব একটা আলাদা নয়। এটি বরং তাঁর একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। মূল্যায়ন শেষ হলে আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে এর উত্তর পাঠাব।”
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এমন সময়ে হুতি বিদ্রোহীদের জড়িয়ে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প, যার আগে দুই দিন ধরে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর সিরিজ বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শনিবার রাতে ও পরদিন রবিবার চালানো এসব হামলায় পাঁচ শিশুসহ অন্তত ৫৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হুতি সদস্য রয়েছেন। রবিবার রাতে বন্দর নগরী হুদাইদাতেও মার্কিন হামলার খবর পাওয়া গেছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরিতে হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে জানান, “ওই রণতরি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। হামলার মুখে জাহাজটি ইয়েমেনের পানিসীমা ছাড়তে বাধ্য হয়।”
হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল হুথি বলেছেন, “যত দিন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করব।”
তবে মার্কিন বাহিনীর তরফে ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান আক্রান্ত হওয়ার দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি