হামাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের, ইতিহাসে বিরল

0

গাজা উপত্যকায় আটক মার্কিন জিম্মিকে মুক্ত এবং যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি বৃহত্তর চুক্তির লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে গোপনে সরাসরি আলোচনা করেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহেলার সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

বুধবার দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ আলোচনা ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা। কারণ দেশটি এর আগে কখনও এই সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেনি। ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত’ করে মার্কিন সরকার।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন যে হামাসের সঙ্গে আলোচনার পথে হাঁটতে পারে এমনটা ইসরায়েলকে জানানো হয়েছিল। এরপর দু’পক্ষে আলোচনা হয়ে গেছে। ইসরায়েল সেটি অন্য একটি চ্যানেলের মাধ্যমে জেনেছে।

এই আলোচনার লক্ষ্য হলো হামাসের কাছে আটক থাকা মার্কিন জিম্মিকে মুক্ত করা। এছাড়া সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস। যেটির লক্ষ্য হলো সব জিম্মিকে মুক্ত করা এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র অ্যাক্সিওসকে জানিয়েছে, আলোচনা চললেও হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনও ধরনের চুক্তি এখনও হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকোফের মঙ্গলবার কাতারে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হতো। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি তার সফর বাতিল করেছেন।

অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ট্রাম্প বারবার হুমকি দিয়ে আসছেন যে, হামাসের জন্য ‘নরকের দরজা খুলে’ দেবেন এবং গাজা দখল করবেন। এছাড়া ইসরায়েলকে না জানিয়ে হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি ভিন্ন পদক্ষেপ, যা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতে কখনও ঘটেনি। 

হামাসের কাছে এখনও ৫৯ জিম্মি রয়েছে। যার মধ্যে ৩৫ জনই মারা গেছে বলে ধারণা ইসরায়েলের। এই ৫৯ জিম্মির মধ্যে একমাত্র মার্কিন জীবিত জিম্মি হলেন ২১ বছর বয়সী ইডান-আলেক্সান্ডার। তাকে মুক্ত করতেই মূলত আলোচনা চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করারও চেষ্টা চলছে।

গত শনিবার হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ওইদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় সব ধরনের খাদ্য পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে, হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি বুধবার বিকালে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। 

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, হামাস প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন। তবে আলোচনার বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে জানাতে লেভিট অসম্মতি জানান।

তিনি বলেন, “মার্কিন জনগণের স্বার্থে যা সর্বোত্তম তা-ই করার জন্য সংলাপ এবং বিশ্বব্যাপী লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট প্রমাণ দিয়েছেন যে, তিনি যা বিশ্বাস করেন তা হলো, আমেরিকান জনগণের জন্য যেটি সঠিক তার জন্য সদিচ্ছার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালানো।”

লেভিট আরও বলেন, “হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে।”

তবে গাজায় ‘মার্কিনিদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউস। সূত্র: অ্যাক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here