হাত-পা ঝিন ঝিন বা অবশ মনে হলে

0

অনেকেরই হঠাৎ করে হাত-পায়ে ঝি-ঝি লাগে বা অবশ হয়ে যায়। আমরা দৈনন্দিন প্রাকটিসে প্রায় সময়ই এরকম কিছু রোগী পেয়ে থাকি। যারা হাত অথবা পায়ের ঝিম ধরা বা অবশ অনুভূত হওয়া এই ধরনের উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে যেসব রোগী আসেন তাদের মাঝে কেউ কেউ বলেন রাতে একদিকে কাত হয়ে শুলে খানিকক্ষণ পর ওই পাশের হাত ও পা অবশ অনুভূত হয়। তারপর শোয়া থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটহাঁটি করলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এসব কারণে রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়, কারো কারো ক্ষেত্রে হাতে কোনো জিনিস কিছু সময় ধরে রাখলে হাত ঝিম বা অবশ মনে হয়। কিছুক্ষণ পর আর ধরে রাখতে পারেন না। এমনকি মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় বেশিক্ষণ মোবাইলটি কানে ধরে রাখতে পারেন না। 

কারো কারো অনেকক্ষণ বসে থাকলে পায়ে ঝি-ঝি লাগে অথবা অবশ হয়ে যায়। কিংবা হাতে ভর দিয়ে কাজ করছিলেন হঠাৎ দেখলেন হাতটা অবশ হয়ে গেছে নাড়াতে পারছেন না। কিংবা মাঝে মধ্যেই শরীরের কিছু অংশ অবশ অবশ মনে হয়।

একই অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কাজ করা কিংবা নরম বিছানায় শোবার কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে, এছাড়াও অনেকগুলি কারণে এই ধরনের সমস্যাগুলি সমস্যা দেখা দিতে পারে, কেউ কেউ এ বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে নেন না। তবে হাত পা হঠাৎ অবশ হওয়া মারাত্মক রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা প্রায়শই দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিভিন্ন কারণে আমাদের হাত অথবা পায়ে ঝিন ঝিন বা অবশ অনুভূত হতে পারে। যেমন –

১. আমাদের হাত ও পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে এই সমস্যা হতে পারে।

২. কারো যদি সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় এবং লাম্বার স্পাইন বা কোমরে নার্ভ বা স্নায়ুর ওপর চাপ লেগে থাকে তাহলেও এই ব্যথা হতে পারে ।

৩. যারা দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কাজ করেন।

৪. শোবার বিছানা বেশি নরম হলে হতে পারে।

৫. তা ছাড়া কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। যেমন : সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস, কারপাল টানেল সিনড্রোম, লাম্বার স্পনডাইলোসিস, ভেরিকোজ ভেইন, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, ডায়বেটিক নিউরোপ্যাথি, মটর-নিউরন ডিজিজ ইত্যাদি।

৬. ভিটামিন বা মিনারেলসের অভাবজনিত কারণে।

আমরা অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেই না। যার ফলে রোগটি পরবর্তীকালে মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের  পরামর্শ নিতে হবে এবং কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।

করণীয়-

১. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন 

২. একই অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট পর পর ৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া যেমন-যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন তারা একটু হাঁটবেন, যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন একটু বসে বিশ্রাম নিবেন।

৩. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যাদের বিএম আই অনুযায়ী ওজন বেশী তাদের ওজন কমাতে হবে।

৪. ডায়বেটিক রোগীদের ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৫. উল্লেখিত অন্যান্য রোগ থাকলে যথাযত চিকিৎসা নিতে হবে

৬. সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাটতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here